৩ দিনের টানা বর্ষণে উপকূলীয় এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্থ
টেকনা প্রতিনিধি :
উপকূলীয় অঞ্চল টেকনাফে তিন দিনের টানা বর্ষণে জন-জীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। ভারী বৃষ্টি, বঙ্গোপসাগর ও নাফনদীর জোয়ারের পানিতে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বসত-বাড়ি, সড়ক, মৎস্যঘের ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা ।
গত রবিবার ভোর হওয়ার আগেই শুরু হওয়া বিরতি ছাড়াই বৃষ্টির গতি বাড়তে থাকে। ভারী বৃষ্টিতেই কোথাও এক হাঁটু আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, এ ৩দিনে টেকনাফে ১৭৭ মিঃ লিঃ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে বৃষ্টিপাতের এ রেকর্ড স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি। ভাদ্র মাসে এতো বৃষ্টিপাত অস্বাভাবিক বলে জানান।
প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। যারা বেরিয়েছেন তারাও অটো বা রিকশা না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন। এছাড়া জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ চরমে উঠেছিল। টেকনাফ-কক্সবাজার এলাকায় চার কিলোমিটার সড়কে অতিরিক্ত পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত পানির কারণে ওই সড়কেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মেরিন ড্রাইভ সড়কে একটি স্থানে ভাঙন ও কয়েকটি স্থানে পাহাড় থেকে মাটি রাস্তার উপর ধসে পড়ায় যান টেকনাফ কক্সবাজার সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাহারছড়া এলাকার সড়কেও ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়া কয়েকটি কাঁচা ঘর-বাড়িতে পানি জমে যাওয়ায় বাসিন্দারা মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়। শাহপরীরদ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে গেছেন। নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে বীজতলা ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে, চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে, কোথাও কোথাও ঢেউয়ের তোড়ে নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাষিরা ফসল নিয়ে রয়েছেন দারুণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে। বিশেষ করে ব্যাপক হারে বন্যা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য সর্তকতা জারী করেছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও নিরাপদ সূপেয় পানির সংকট।
সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান জানান- শাহপরীরদ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ পানি বন্ধ হয়ে রয়েছে এবং জোয়ারের পানিতে ঘোলার পাড়া, জালিয়াপাড়া, মাঝের পাড়ার প্রায় ২শতাধিক বসত-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণ পাশ্ববর্তী উঁচুগ্রামে আশ্রয় নিয়ে রাত যাপন করছে। বলতে গেলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শাহপরীরদ্বীপের ৪০ হাজার মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। ওই এলাকার লোকজন কোন প্রকারে প্রতিবেশী গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে।
টেকনাফ পৌর এলাকার টেকনাফ কলেজসহ কলেজ পাড়া, জালিয়াপাড়ায় পানিতে প্রাইমারী স্কুল ও রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। পাহাড়ী ঢলে কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ এবং স্থানীয় গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় জনসাধারণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে অত্র ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, মৎস্যঘের ও বসত-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং ভূমি ধ্বসে প্রাণহানি এড়াতে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী, নয়াবাজার, রইক্ষ্যং ও উলুবনিয়া এলাকায় পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারের পানিতে ৮০/৯০ ভাগ মৎস্যঘের ভেসে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌঃ হাবিব উল্লাহ জানান- প্রচারনা চালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সেন্টমার্টিনের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। দ্বীপবাসী আতংকে দিনাতিপাত করছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, উপজেলায় মাইকিং করে ভূমি ধ্বস ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে জানমাল রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। যারা পাহাড় থেকে সরে যাবেনা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।
এছাড়া ভারী বর্ষণ, সতর্ক সংকেত, নদ-নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় নৌকা ও ট্রলার দিয়ে মাঝি মাল্লারা মাছ শিকারে যেতে না পারায় বিভিন্ন মাছ বাজারে মাছের চরম আঁকাল দেখা দিয়েছে। নিত্যদিনের চািহদার তুলনায় মাছের বেঁচা-বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলকভাবে খুবই কম।