দু’মাস পর পাহাড়ের ব্যস্ত নগরী রাঙামাটি

fec-image

সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর রোববার (৩১মে) সকাল থেকে সারাদেশের ন্যায় পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অফিস-আদালত খুলেছে। সড়কে যান চলাচল পূর্ণদ্যমে শুরু হয়েছে। ব্যস্ত সময় পার করছে অফিস পাড়াগুলো। বসে নেই ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শ্রমিকরা। যে যার মতো কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর পাহাড়ে পুনরায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে আবার।

জেলা শহরে একমাত্র বাহন হিসেবে সুপরিচিতি সিএনজি (অটোরিক্সা) সকাল থেকে যাত্রী বহনে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যানটি চলাচল করছে বলে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

রাঙামাটি অটোরিক্সা চালক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুজ্জামান মহসিন রোমান বলেন, সকল চালক এবং যাত্রীরা যেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচল করে। এজন্য চালক এবং যাত্রীরা সকলে মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাবস ব্যবহার করবে।

এদিকে জেলায় সিএনজি চলাচল করলেও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যে কারণে দূর দূরান্তে যাওয়া যাত্রীরা বাস কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিটের জন্য ভিড় করতে দেখা গেছে।

আশরাফ বাস কাউন্টার এর প্রোপাইটার মো. রফিক বলেন, বাসের টিকিট কিনতে যাত্রীরা ভিড় করছে। আপাতত আমরা বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছি। যখন বাস মালিকদের কাছ থেকে নির্দেশনা পাবো তখনি টিকিট বিক্রি শুরু করবো।

রাঙামাটি- চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতি কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি শহিদুজ্জামান মহিসিন রোমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে দুই সিটে একজন যাত্রী তথা ৩৬সিটে ১৮জন এবং ৪০সিটে ২০জন যাত্রী বহন করা হবে। এজন্য যাত্রীদের ১৯০টাকা করে ভাড়া প্রদান করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আপাতত রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি-বান্দরবার রুটে পাহাড়িকা সার্ভিস চালু করা হলেও বিরতিহীন সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে রাঙামাটিতে সকাল থেকে সকল প্রকার দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল করতে দেখা গেছে। স্বাস্থবিধি মানার জন্য লঞ্চ চালক এবং যাত্রীদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তবে লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়।

বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা রাঙামাটি অঞ্চলের চেয়ারম্যান মঈনুদ্দীন সেলিম বলেন, নৌ-চালক এবং যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে না তাদের লঞ্চে উঠানো হবে না বলে জানান তিনি। এছাড়া লঞ্চের ভাড়া পূর্বের ন্যায় রাখা হয়েছে বলে যোগ করেন।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাঙামাটি শহরের শপিংমলগুলো খুলেছে। প্রথমদিনে উল্লেখযোগ্য বিকিকিনি নেই বললেই চলে।

রাঙামাটি বিএম শপিং কমপ্লেক্স এর প্রগতি সু-স্টোর’র স্বত্তাধিকারী মো. মোজাম্মেল বলেন, সকাল থেকে কয়েকজন ক্রেতা এসেছিলো। তবে প্রথমদিন উল্লেখযোগ্য কোন ক্রেতা ছিলো না। কারণ মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেসব ক্রেতা মালামাল ক্রয় করার জন্য আসছে তাদের আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানে প্রবেশ করাচ্ছি।

বধুয়া শাড়ি বিতানের স্বত্তাধিকারী সুজন মহাজন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দোকান খোলার নির্দেশনা পেলেও তেমন খুশি হতে পারছি না। কারণ আমরা এখনো করোনামুক্ত হতে পারিনি। এখন দোকান খুললেও ক্রেতারা আসবে কিনা। বিকিকিনি কেমন হবে তা ভেবে দুশ্চিন্তায় আছি।

তিনি আরও বলেন, প্রথমদিন কিছু ক্রেতা এসেছিলো। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের দোকানে প্রবেশ করাচ্ছি।

রাঙামাটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট, আবাসিক হোটেল-মোটেল খুললেও পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। পর্যটক আগমনে রয়েছে বিধিনিষেধ। যে কারণে যান চলাচল করলেও পর্যটকরা রাঙামাটিতে প্রবেশ করতে পারবে না।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) উত্তম কুমার হোম দাশ বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে রাঙামাটিতে সকল প্রকার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত খোলা হয়েছে। তবে দোকান-পাট বিকেল চারটার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এনডিসি আরও বলেন, রাঙামাটিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকাল প্রকার পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ থাকবে। যে কারণে রাঙামাটিতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী থাকবে।

প্রসঙ্গত: করোনা সংকট মোকাবিলায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এক জরুরী সভার মাধ্যমে চলতি বছরের গত ২৬ মার্চ থেকে রাঙামাটিতে সকল প্রকার যান চলাচল, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট, পর্যটন স্পট বন্ধ ঘোষণা করে এবং জেলায় পর্যটক ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়ি, ব্যস্ত নগরী, রাঙামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন