আলীকদমে তামাক চাষী হয়রানী ও গ্রেড নির্ধারণে প্রতারণার অভিযোগ
আলীকদম প্রতিনিধি:
বান্দরবানের আলীকদমে তামাক চাষীদের হয়রানী, গ্রেড নির্ধারণে প্রতারণা করায় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবী করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে তামাকচাষীরা। স্মারকলিপিতে ৬টি দাবী তুলে ধরে হয়। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে তামাক চাষী, কোম্পানী ও প্রশাসনের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ছে।
গত ১৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদত্ত স্মারকলিপিতে তামাকচাষীরা জানান, গত কয়েক দশক ধরে আলীকদমে তামাক কোম্পানীগুলোর কৌশলী প্রচারণার কারণে তামাক চাষ রোধ করা যাচ্ছেনা। মৌসুমের শুরুতে তামাক চাষ বিস্তারে কোম্পানীগুলোর কৌশলী প্রচারণা অব্যাহত থাকে। অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় তামাক চাষ বিস্তারের অন্যতম কারণ কৃষক উদ্বুদ্ধকরণে কোম্পানীগুলোর লাগামহীন প্রতিযোগিতা চলছে।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, তামাক উৎপাদনের চাষীরা হচ্ছেন কোম্পানীগুলোর গ্রোয়ার-পার্টনার। কোম্পানিরা তামাক ক্রয়ে সুদমুক্ত সার, বীজ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা না দিলে তামাক উৎপাদন বৃদ্ধি পেত না। কোম্পানী ছাড়া সব তামাকই ওয়েস্টেজ প্রোডাক্ট। স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের জন্য তামাক কোম্পানীগুলো অন্যতম দায়ী।
প্রতিবছর তামাক ক্রয় মৌসুমে কোম্পানীগুলোর পুঁজিবাদী নীতি কৌশলগত হেরফেরে পড়ে চাষীরা তামাকের সঠিক মূল্য পাচ্ছেনা বলে দাবী করেন চাষীরা। কোম্পানীগুলোর কৌশলী প্রচারণার কারণে চলতি বছর আলীকদমে ব্যাপক তামাক উৎপাদন হয়েছে দাবী করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, কোম্পানগুলো কৌশলী ভূমিকায় উৎপাদিত তামাক আর্থিক মূল্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে চাহিদার বিপরীতে ওয়েস্টেজ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। কোম্পানীগুলোর এই ধরণের বিশ্বাসঘাতকতা, হঠকারিতা ও শঠামীর কারণে বর্তমানে আলীকদম উপজেলার শত শত কৃষক রাস্তায় নেমে এসেছেন বলে দাবী করেন চাষীরা।
স্মারক লিপিতে ৬টি দাবী তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- ১. তামাকের গ্রেডিং ও মূল্য নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানীগুলোর প্রতারণা বন্ধ করা, ২. চাষীদের উৎপাদিত তামাক ক্রয়ে কোম্পাানীগুলোর নিশ্চয়তা বিধান করা, ৩. বর্তমানে তামাক কোম্পানীগুলো তামাক ক্রয়ের টিপি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে। কোম্পানীগুলোর এধরণের শঠামীপূর্ণ সিদ্ধান্ত পরিহার করা, ৪. তামাক কোম্পানীগুলো তামাকের বেল ওজন দেয়ার সময় ২ কেজি হারে কম দিচ্ছে। এ ধরণের ওজনে ফাঁকি দেওয়ার মাধ্যমে কৃষক হয়রানী বন্ধ করা, ৫. স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ তামাক কোম্পানিগুলোর প্রকৃত চাহিদা ও চাষের লক্ষ্যমাত্রা সমন্বয় করতে এবং কোম্পানিগুলোকে এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং ৬. তামাকের মূল্য নির্ধারণে গঠিত ত্রিপক্ষীয় রেট বার্গেনিংয়ের সময় স্থানীয় কৃষক প্রতিনিধি নিয়োগ করা।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, চলতি বছর আলীকদমে অতিরিক্ত তামাক উৎপাদনের সুযোগে এ পণ্যটির দরপতনে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে ঢাকা ট্যোবাকো ইন্ডাষ্ট্রিজ, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো ও আবুল খায়ের ট্যোবাকো কোম্পানী। এই তিন কোম্পানী পরস্পর যোগসাজশ করে তামাকের দরপতন ঘটনানোর কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে। তামাক কোম্পানীগুলো বর্তমানে তামাকের সঠিক মান ও মূল্য নির্ধারণের জন্য চাষীদের অনুরোধ পাত্তাই দিচ্ছেনা। গত মৌসুমে তামাক উৎপাদন ও চাহিদা মোটামুটি সমান থাকায় কোম্পানীগুলো মূল্য নির্ধারণ করেন তামাকের সর্বনিম্ন গ্রেড ৭৭ টাকা ও সর্বোচ্চ গ্রেড ১৪৩ টাকা কেজি প্রতি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে। কিন্তু চলতি বছর তামাকের অতিরিক্ত উৎপাদন ঘটিয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড ১৪৬ টাকা দিলেও গ্রেডিং করার ক্ষেত্রে শঠতার আশ্রয় নিচ্ছে কোম্পানীগুলো। কোম্পানীগুলোর এ ধরণের শঠাতা অব্যাহত থাকলে অত্র উপজেলার শত শত কৃষক দেওলিয়া হয়ে যাবে আশঙ্কা করেন চাষীরা।
এ সঙ্কট নিরসনে গত ১৬ এপ্রিল আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কৃষকদের দাবী দাওয়া মেনে নেওয়া হবে শর্তে বৈঠকের সমাপ্তি ঘটে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।