আজ পেকুয়ার ৭ ইউপির নির্বাচন : ধানের শীষ ও নৌকার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

1Kf4Ewm
পেকুয়া প্রতিনিধি :
কক্সবাজার পেকুয়ায় প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এক লক্ষ এক হাজার একশ ১১ জন ভোটার ৭ ইউনিয়নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। অনেক শংকা ও আতংকের মাঝে আজ ৩১ মার্চ এ নির্বাচনে ৩২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল, হাতপাখার মতো দলীয় প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিভিন্ন মার্কা নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।

প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকেই নির্ঘুম প্রচার-প্রচারনায় উপজেলার পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী উত্তাপ সৃষ্ঠির পর এখন শেষ মুহুর্তে সাধারণ জনগণের মাঝে একটিই প্রশ্ন- আদৌ নির্বাচন সুষ্টু হচেছ কিনা।

রির্টানিং অফিস সূত্রে জানা যায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নে বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী ও পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ (ধানের শীষ), আওয়ামীলীগের মনোনীত উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেটে কামাল হোসেন(নৌকা), শাহআলম(আনারস), নাছির উদ্দিন(হাতপাখা), পেকুয়া মূল কেন্দ্র ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বনাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি দুজনেই চেয়াম্যান হিসেব দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তির মাঝে মূল লড়াই হবে।

রাজাখালী ইউনিয়নে বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন সিকদার(ধানের শীষ), আওয়ামীলীগের মনোনীত মাষ্টার আজমগীর চৌধুরী(নৌকা), ইসলামী আন্দোলনের হেলাল উদ্দিন(হাতপাখা), জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবির(চশমা), জাতীয় পার্টির মনোনীত শাহাব উদ্দিন(লাঙ্গল), স্বতন্ত্র ছৈয়দ নুর(আনারস), নুরুল আবছার বদু(টেলিফোন), শামসুন্নাহার(রজনীগন্ধা), রাজাখালীতে মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে চতুর্মূখী। কেউ পাল্লা ভারি রাখছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছৈয়দনুর বনাম জাতীয় পার্টির শাহাব উদ্দিনের মাঝে আবার অনেকে বলেন, শেষ লড়াই হবে বিএনপি অধ্যূষিত এ ইউনিয়নে নৌকা ধানের শীষেই।

উজানটিয়া ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী মিন্টু(ধানের শীষ), আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এম, শহিদুল ইসলাম চৌধুরী(নৌকা),আজিজুলহক (আনারস), জাতীয় পার্টির দেলোয়ার করিম চৌধুরী(লাঙ্গল), এইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের রেজাউল করিম মিন্টুর সাথে চুড়ান্ত লড়াই হবে। ক্লিন ইমেজের মিন্টুর পাল্লা ভারী করেছে ধানের শীষ এমন মন্তব্য অনেকের।

মগনামা ইউনিয়ন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম(ধানের শীষ), আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী খাইরুল এনাম(নৌকা), বর্তমান জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান শহিদুল মোস্তফা চৌধুরী(আনারস), জাতীয়পার্টির ইউনুছ চৌধুরী(লাঙ্গল), মগনামায় নির্বাচনী লড়াইয়ের মূল স্রোতে নেই নৌকা প্রতীক। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত প্রার্থী শহিদুল মোস্তাফা, বিএনপি প্রার্থী ওয়াসিম ও জাতীয় পার্টির ইউনুচ চৌধুরীর মধ্যে ত্রিমূখী লড়াই হবে বলে ধারণা করেন।

শিলখালী ইউনিয়ন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নুরুল হোছাইন(ধানের শীষ), আ’লীগের মনোনীত কাজীউল ইনসান(নৌকা), জাহেদুল করিম (আনারস), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ (লাঙ্গল), শিলখালীতে বিএনপি প্রার্থী অভিঙ্গ নুরুল হোছ্ইানের কাছে নির্বাচনী মাঠের নবীন খোলোয়াড় নৌকা প্রতীকের কাজীউল ইনচান অনেকটা অসহায় আত্ম সমর্পন করবে বলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

বারবাকিয়া ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ এ,এইচ,এম বদিউল আলম(চশমা), বিএনপির মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম(ধানের শীষ), আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী জিএম আবুল কাসেম (নৌকা), শহিদুর রহমান ওয়ারেচী(লাঙ্গল),বারবাকিয়া জামায়াতের হাতেই অবিচ্ছিন্ন থাকবে বলে গুঞ্জণ নির্বাচনী আমেজ শুরু থেকে শুনা যাচ্ছে। প্রতীদ্বন্ধিতায় বি.এন.পি প্রার্থী তরুণ ইঞ্জিনিয়র সাইফু না নৌকার জি.এম.কাশেম সেটিই আলোচনায় থাকছে।

টইটং থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রমিজ উদ্দিন আহমদ(ধানের শীষ), আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী(নৌকা), হাসান শরীফ চৌধুরী(আনারস), শহিদুল্লাহ বিএ(ঘোড়া)। নির্বাচনী আবাহ সৃষ্টির শুরু থেকে এখানে নৌকা ধানের শীষকে ডিঙ্গিয়ে জামায়াত প্রার্থী হাসান শরীফ ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহর পাল্লা ভারিই দেখা যায়। এদিকে নৌকার প্রতীকের জাহেদ নিজের ভরাডুবি বুঝতে পেরে শহিদুল্লাহকে অপহরণ করে অবশেষে মামলার আসামী হয়ে যাওয়ায় এখানে কে জয়ী হবে তা এখন দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

চেয়ারম্যানের প্রতীক বরাদ্দের সাথে ৩৪০জন সাধারন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের মাঝে ও প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৩১মার্চের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন প্রার্থীরা চুড়ান্ত প্রস্তুতির পথে। পথ সভা হউস ক্যাম্পিং মাইকিং চালিয়ে ভোটারদের মনজয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বি.এন.পির দূর্গ খ্যাত পেকুয়ার সাধারণ লোকজনের মধ্যে স্বাভাবিক নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের বাধাবিপত্তির আশংকার পাশাপাশি সংঘাতের আতংকও বিরাজ করছে। প্রায় প্রত্যেক ইউনিয়নে বি.এন.পি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা সরকার দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে হয়রানি ও হুমকিধমকির অভিযোগ তুলেছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুর রশিদ খান জানান, নির্বাচন পূর্ব সহিংসতা ও আইন-শৃংখলা রক্ষায় ৩ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ১ টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ২ টি মোবাইল টিম মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, নির্বাচনের দিন পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নের ৬৩ টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে ১৭ জন আনসার ও ৭ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছে। এছাড়াও ৭ ইউনিয়নে র‌্যাবের ৭ টি টিম টহলে থাকবে বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ৭ ইউনিয়নের মধ্যে পেকুয়া সদর ও রাজাখালী ইউনিয়নের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মুরাদ চৌধুরী, বারবাকিয়া, টইটং ও শিলখালী ইউনিয়নে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুনিরুজ্জামান রাব্বানী ও মগনামা এবং উজানটিয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদ চৌধুরী রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসার, সহ প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পুলিশ ও আনসার এবং আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত ব্যালেট পেপার, ব্যালেট বাক্সসহ প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে স্ব স্ব ভোট কেন্দ্রে পৌছে গেছেন।

আজ সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তারপর এ নির্বাচনে শেষ হাসি হাসবে কারা সেই ফলাফলের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন