রোয়াংছড়িতে ২৮টি রিংওয়েল প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
রোয়াংছড়ি প্রতিনিধি:
রোয়াংছড়ি উপজেলায় প্রত্যন্ত এলাকার ২৮টি রিংওয়েল প্রকল্পের কাজে নয়-ছয় করায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের স্টাফ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের প্রায় ৬জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন। তার মধ্যে মেকানিক্যাল পদে কর্মরত পুরোনো স্টাফ হিসেবে মো. জহিরুল ইসলাম রোয়াংছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের প্রায় ৩০ বছর যাবত চাকুরী করছেন। তিনি অফিসের কর্মকর্তাদের মেনেজ করে সকল কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব নিয়ে মেকানিক জহিরুল ইসলাম সব কাজ সামাল দিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে।
তিনি সর্বোপরি রোয়াংছড়ি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসে যোগদানের পর থেকে একজন কর্মচারি হয়েও ঠিকারদারি কর্মকাণ্ডের সাথে জরিত হয়ে বহুদিন যাবত ব্যাপক অনিয়মে কাজ করে চলেছে। কোন নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে ঠিকাদার লাইসেন্স মালিককে পারসেন্টিস দিয়ে প্রত্যেকটি প্রকল্পের কাজে ভুয়া টেন্ডার করে অফিসারের সাথে যোগসাজসে প্রকল্প টাকাগুলো ভাগ বাটওয়ারা করে নিচ্ছে।
প্রকল্পের স্টিমিটের রিংওয়েলে গভীরের প্রায় ৪৫-৫০ ফুট গভীরের পানি লেয়ার না পাওয়া পর্যন্ত মাটি খুঁড়তে হবে। ইতোমধ্যে কোন নিয়ম না মেনে সামন্যতম পানি পেলে রেখে দেওয়া হয়। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে পিইডিপি-৩, থেকে ৯টি রিংওয়েল বরাদ্ধ পায়। তার মধ্যে নোয়াপতং ইউনিয়নে ৫নং ওয়ার্ড ম্রক্ষ্যং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, বাঘরামা পূর্ব বিগ্নসেন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, থলি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে বড়শিলা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, পাইক্ষ্যং পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, ঘেরাউ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, ঘেরাউ মুখ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, তারাছা চিঞাংমুখ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, কদমপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি, কাজ করার কথা বলেও বাস্তবতা কোন কাজ হয়নি বলে চলে। বিগত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে পিইডিপি-৩ প্রকল্পটি নামে মাত্র কাগজ কলমে করা হচ্ছে।
সন্ধানে জানা গেছে, নিয়মে প্রায় ৪৫-৫০ ফুট অধিক থাকলেও কেবল ৩৫ ফুট পর্যন্ত রিংওয়েল মাটি খুঁড়ে প্রতিনিয়ত জনগণকে ঠকিয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি না পেলেও নিচে মাটি না খুঁড়ে কাজটি শেষ করে দেয়। রিং নির্মাণের ক্ষেত্রেও রডের বদলে নিম্নমানের গুণা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এ রিংও কোন টেকসই হবে না। নির্মিত রিংও কাজ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে গেছে।
সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, মেকানিক জহিরুল ইসলাম একাই একশ। অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারি, ঠিকাদার ও মেকানিক বলতে সব তিনি একজন। অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম আশরাফ চৌধুরী থাকলেও অফিসের সব কাজে জহিরুল ইসলাম সামাল দেন। অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ও ফাইলসহ তার হাতে থাকে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে আইন ভঙ্গ করে নামে বেনামে ঠিকাদার লাইসেন্স নিয়ে জহিরুল ইসলাম নিজের ঠিকাদারই কাজ করে চলেছে। কিন্তু ঠিকমতো কাজও করে না। আগে যে রিংওয়েলে অকেজো এবং রিপেয়ারিং কাজটি করা হচ্ছে তাকেও নতুন ভাবে এসে লিস্ট করে নিচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন স্থানে আগে যা দেওয়া হচ্ছে তা সবগুলো অকেজো হয়ে আছে। পরিমাণ মতো কাজ না করাই শুকনো মৌসুম এলে রিংওয়েল পানিগুলো শুকিয়ে যায়। তাই আর কোন পানি না পেয়ে অচলাবস্থা হয়ে পড়ে আছে।
এব্যাপারে জহিরুল ইসলাম এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা অফিসের (ইজিপি) মাধ্যমে টেণ্ডারের ঠিকাদার নিয়োগ করেন। আমি তো মাত্রই একজন মেকানিক্যাল। এ কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় নিয়মিত দেখভাল করেছি।
টাকার পরিমাণ এর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৮টি রিংওয়েলের মধ্যে প্রতিটি রিংওয়েলের জন্য ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ। গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে প্রায় রিংওয়েল কাজ করেছি। এবারে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে স্যানিটেশন কাজটি পায় উচনু মারমা ইন্টাপ্রাইজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রকৃত লাইসেন্সের মালিক ঠিকাদার উচনু মারমা ক’মাস আগে মারা গেছেন। মৃত উচনু মারমা ঠিকাদার পরিবর্তে তার সহযোগী ঠিকাদার হিসেবে মিলন এ কাজটি করছেন।
সহযোগী ঠিকাদার মিলনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, টেণ্ডারের পর অফিস থেকে কোন কাগজ পত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না। কত টাকা বরাদ্ধ হয়েছে এবং কোন এলাকার কাজ চলছে তা অফিসের কর্মকর্তা আশরাফ সাহেব থেকে জেনে নিবেন।
রিংওয়েলে কাজ করা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঠিকাদার কে তা জানেন না। আমরা মাঝি রহিমের এবং জহির ভাই আন্ডারে কাজ করছি। এ বিষয়ের মাঝি রহিম এবং জহিরুল ইসলাম বলতে পারবেন।
উপসহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম আশরাফ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রোয়াংছড়ি উপজেলাতে ২৮টি রিংওয়েল বরাদ্ধ পেয়েছি। তা বর্তমানে প্রকল্পের বাস্তবায়নে কাজ চলছে।
২৮টি রিংওয়েলে টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি রিংওয়েলে টাকা বরাদ্ধ পরিমাণ ১লক্ষ ৫হাজার টাকা। ২৮টি রিংওয়েল মোট টাকার বরাদ্ধ পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। গত অর্থ বছরে কোন বরাদ্ধ ছিল না তাই কাজ করতে পারিনি।