আন্তর্জাতিক আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায়ের অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা, সসম্মানে ফিরতে চান তারা

fec-image

বহুল প্রতিক্ষীত ও আকাঙ্খীত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সংস্থা আন্তর্জাতিক আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায় প্রকাশ করা হবে। এ রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সুষ্ঠু রায়ে ন্যায্য অধিকার ফিরে পেলে সসম্মানে মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গারা। পাশপাশি রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়রাও এ রায়ের অপেক্ষা করছেন বলেও জানা গেছে।

রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের অভিযোগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পক্ষে আফ্রিকা মহাদেশের গাম্বিয়া রাষ্ট্রের করায় মামলায় বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) অন্তর্বর্তীকালীন রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)। এ রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে রোহিঙ্গারা।

আন্তর্জাতিক আদালতের সুষ্ঠু রায় নিয়ে সসম্মানে মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গারা। তাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের প্রত্যাশা একটি দৃষ্টান্তমূলক রায় প্রদান করে দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হবে।

জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় নেদারল্যান্ডসের হেগের আদালতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে গাম্বীয়া বনাম মিয়ানমারের রায় ঘোষণা করা হবে বৃহস্পতিবার(২৩ জানুয়ারি)।

এ রায়ের দিনক্ষণ ঘোষণা করার পর থেকে রোহিঙ্গাদের দৃষ্টি এখন হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের দিকে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে ক্যাম্পে বসে নিয়মিত রেডিও টেলিভিশনে চোখ রেখে আসছে।সেই সাথে তাদের মোবাইলে দেশে বিদেশে যোগাযোগ রাখছে।

বহুল আকাঙ্খীত রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে লাখো রোহিঙ্গা। এ রায়ের মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব ও ন্যায্য অধিকার নিয়ে স্ব সম্মানে ফিরতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে বলে জানিয়েছেন তারা। এ রায় নিজেদের পক্ষে পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করছে রোহিঙ্গারা।

এর আগে আদালতের শুনানিতে অংশ নিয়ে রাখাইনে গণহত্যার পক্ষে সাফাই গান সু চি। তিনি দাবি করেন, এই বিষয়ে মামলা পরিচালনার এখতিয়ার জাতিসংঘের আদালতের নেই। গণহত্যার অভিযোগ খারিজ করতে বিচারককে তিনি আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক আদালতে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর। সে সময় গাম্বিয়ার পক্ষে লড়েন দেশটির আইনমন্ত্রী এবং মিয়ানমারের পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন দেশটির কার্যত সরকার প্রধান অং সাং সু চি।

তার (সূচির) এ দাবিকে প্রত্যাখান করে বড় ধরণের মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেন রোহিঙ্গারা। অপর দিকে জাতিসংঘের সর্বেচ্চ সংস্থা আন্তর্জাতিক আদালত একটি দৃষ্টান্তমূল রায় দিয়ে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

২৭ নং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) গাম্বিয়ার করা মামলায় আন্তর্জাতিক আদালত অন্তর্বর্তীকালীন রায় প্রকাশ করা হবে। এ রায় সুষ্ঠুু ও সুন্দর হলে অর্থাৎ তাদের নাগরিকত্ব ও ন্যায্য অধিকার ফিরে দেওয়া হলে মিয়ানমারে ফিরতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

হেড মাঝি বজলুর রহমান জানান, রায় আমাদের পক্ষে আসার জন্য আমরা নারী পুরুষ প্রার্থনা অব্যাহত রেখেছি।

রোহিঙ্গা নেতা মহিববুল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের গত শুনানিতে সূচি যা বলেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা বলেও উল্লেখ করছেন না।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের সুষ্ঠু রায়ের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা ফিরিয়ে গেলে এতদঞ্চল অভিশপ্ত মুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম বলেন, মানবাতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে স্থান দেওয়া সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

এ নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) এ মামলা করে গাম্বিয়া।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গাম্বিয়া, মিয়ানমার, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন