দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

খাগড়াছড়ি আসনে আ’লীগে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার প্রতিদ্বন্দ্বী আরো আধা ডজন

fec-image

আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার পাশাপাশি আরো প্রায় আধা ডজন নেতা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় দলের উচ্চ মহলে দেন-দরবার শুরু করেছেন।

নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশীরা রীতিমত মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীরাও দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক পক্ষ বলছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিকল্প নেই। অপর পক্ষ বলছেন, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ছাড়া নৌকার বিকল্প প্রার্থী চান তারা।

এর আগে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খাগড়াছড়ি আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তখন দলের মধ্যে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার অনেক আগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার পাশাপাশি নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশীরা হলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জাহিদুল আলম অন্যতম। এছাড়াও সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার নামও আলোচিত হচ্ছে নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সেও চেয়ারম্যান। তিনি ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

বাসন্তী চাকমা বলেন, সবারই স্বপ্ন থাকে। আমারও স্বপ্ন আছে। সে থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খাগড়াছড়ি আসনে মনোনয়ন চাইবো। তবে প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করব।

২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি-জোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। ওই নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসনের কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে দেশে জরুরি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কারণে সেই নির্বাচন আর হয়নি। এর প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার পরিবর্তে যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে খাগড়াছড়ি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, খাগড়াছড়ির উন্নয়নে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিকল্প নেই। তার আমলে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাছাড়া কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পরীক্ষিত নেতা। দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। জায়গা-সম্পত্তি বিক্রি করে দলের নেতাকর্মীদের পিছনে খরচ করেছেন। টানা দুইবার সংসদ সদস্য থাকাকালে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার নেতৃত্বে এ অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারা নির্যাতিত, ত্যাগী, আদি আওয়ামী লীগার, অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা বলেন, দলের জন্য দেওয়া বাকী শুধু জীবনটা। দলের মনোনয়ন চাইবো, দেওয়ার মালিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরো বলেন, যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছি, আজকের এ পরিণতি দেখার জন্য নয়। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি হয়ে পুরো খাগড়াছড়ি জেলাকে অনিয়ম-দুর্নীতির কারখানায় পরিণত করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগকে মৃত ও অকার্যকর করে রেখেছেন, প্রার্থী পরিবর্তন না হলে, আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

সমীর দত্ত চাকমা মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করুণায় মনোনয়ন পেলে খাগড়াছড়ি আসনটা দলকে উপহার দিতে পারবো। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে আবারও মনোনয়ন দিলে কী করবেন এমন প্রশ্নে উত্তরে সমীর দত্ত চাকমা বলেন, দলের নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বও জানে, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মাঠের অবস্থা। কাজেই মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সমর্থনে যিনি মনোনয়ন নিয়ে আসবেন আমরা তার পক্ষে কাজ করবো।

মনোয়ন প্রত্যাশী কংজরী চৌধুরী বলেন, দলের জন্য অনেক ত্যাগ করেছি। কাজেই মনোনয়ন চাইবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য মনে করলে মনোনয়ন দেবেন। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে খাগড়াছড়ি আসনটি উপহার দিতে পারবো।

খাগড়াছড়ি আসনে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান কল্পরঞ্জন চাকমা। তখন ওয়াদুদ ভূইয়া ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। এ নির্বাচনে কল্পরঞ্জন চাকমা নির্বাচিত হলেও সংসদের শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মামলার রায়ে ওয়াদুদ ভূইয়াকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাশের) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্জনের মুখে বিএনপির প্রার্থী ওয়াদুদ ভূইয়া নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে খাগড়াছড়ি আসনে ফের মনোনয়ন পান কল্পরঞ্জন চাকমা। নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী ওয়াদুদ ভূইয়া। এ নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কল্পরঞ্জন চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।

২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের কল্পরঞ্জন চাকমাকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু তিনি বিএনপির প্রার্থী ওয়াদুদ ভূইয়ার কাছে পরাজিত হলে খাগড়াছড়ি ছেড়ে রাঙামাটি চলে যান। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেট কে পাচ্ছেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আ. লীগ, খাগড়াছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন