পার্বত্যনিউজে সংবাদ প্রকাশের পর পেকুয়ায় প্রশাসনের নির্দেশে স্কুল ছাত্রী জান্নাতুলের বাল্য বিয়ে বন্ধ
নিজস্ব প্রতিনিধি.পেকুয়া:
অবশেষে পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদাউসের বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্যে উপজেলা প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। মগনামা ইউনিয়নের শরৎঘোনা গ্রামের নাজিম উদ্দিনের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের (১৫) সাথে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাংলা পাড়া গ্রামের লালু মিস্ত্রির ছেলে ওয়ার্কশপ মেকানিক শফিকুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবকের সাথে বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে।
গত কয়েক দিন ধরে বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিয়েছেন ফেরদৌসের পরিবার। দুই পরিবারের লোকজন বিয়ের আমন্ত্রণপত্র ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিলি করেছেন। কণে পক্ষের প্রদেয় ফার্ণিচার পর্যন্ত বর পক্ষের ঘরে পৌছে দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জান্নাতুল ফেরদাউস নিজেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ অসময়ের বিয়েতে নিজের অসম্মতি জানিয়ে নিজের ভবিষ্যত শিক্ষক হবার জন্যে সহযোগীতা কামনা করেন।
বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে জান্নাতুলের কয়েকজন সহপাঠী গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ এ বিয়ে বন্ধ করতে ব্যাপক প্রচারণায় নামেন। ফেসবুকের মাধ্যমে নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী বাল্য বিয়ের খবর পেকুয়ার সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পার্বত্যনিউজে গুরুত্বের সাথে সংবাদটি ছাপা হলে প্রশাসনও নড়ে চড়ে বসে এ বাল্য বিয়ে বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে ব্যবস্থা নেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন পেকুয়া থানায় অবগতি পত্র দিয়ে এ বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলে পেকুয়া থানার এস.আই মকবুল হোসেন মেয়ের পিতার বাড়ীতে গিয়ে নির্দেশ দিয়ে আসেন কোন মতেই এ বিয়ে হবেনা। এদিকে মেয়ের ও ছেলে পরিবার শুক্রবারের পরিবর্তে রবিবারেই বিয়ে সম্পন্নের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন প্রয়োজনে ধুমধামের আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিয়ে অতিগোপনেই বিয়ে সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নিয়েও রেহায় পায়নি।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জরুরী তলব করে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন বহি জব্দ করে তার কার্যালয়েই নিয়ে আসেন। ইউনিয়ন পরিষদ সহ নিকাহ রেজিষ্ট্রি কেন্দ্রগুলোকেও এব্যাপারে নির্দেশ জারি করেন একজন মেধাবী স্কুল ছাত্রীর বাল্য বিয়ে কোন ভাবেই হতে দেয়া যাবেনা। যদি কোনভাবে বাল্য বিয়ে সম্পন্ন হয় তাহলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। অবশেষে সব আয়োজনের পরও বাল্য বিয়েটি বন্ধ হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবার ও বরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারাও বিয়েটি বন্ধ হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
এব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেকুয়া থানার সহযোগীতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাল্য বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।