বিলাইছড়িতে নিহতরা সকলেই জেএসএস সন্ত্রাসী- কেএনএফ

fec-image

রাঙামাটির বিলাইছড়িতে জেএলএ-কেএনএফ বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৪ জনের কেউই সাধারণ গ্রামবাসী নয় বরং তারা সকলেই জেএসএস সন্ত্রাসী বলে দাবী করেছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট(কেএনএফ)। ২৩ জুন বৃহস্পতিবার সশস্ত্র এ সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ের ইনফর্মেশন ডিপার্টমেন্টের লে. কর্নেল সলোমন প্রচারিত এক বিবৃতিতে এ দাবী করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুন রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’র (কেএনএফ) হামলায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র (পিসিজেএসএস) সশস্ত্র গ্রুপ জুম্মল্যান্ড আর্মির (জেএলএ) ৪ সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয় বলে দাবি করে কেএনএফ’র হেডকোয়াটার্স’র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সলোমন।

সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ তাদের নিজস্ব ফেইসবুক পেইজে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ করে বলেন, মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় বিলাইছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম বড়তলী ইউনিয়নের জাইজাম পাড়ায় জেএলএ’র নতুন সৃষ্ট সশস্ত্র বেসমেন্ট ক্যাম্পে কেএনএফ’র স্পেশাল কমান্ডো ফোর্স হেড-হান্টার টিম সফলভাবে হামলা চালায়।  এতে জেএলএ’র তিনজন সশস্ত্র সদস্য ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পরে আরও একজন মারা যায়। তবে আহত জেএলএ’র অন্যান্য সদস্যরা পালিয়ে পালিতে যেতে সক্ষম হয়।

পার্বত্যনিউজ স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে নিহত ৪ জনের নাম জানতে পারে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, নিহতরা হলেন বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা (৫২), সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা (২৩), বীর কুমার ত্রিপুরা (২১) ও ধনরাম ত্রিপুরা (১৬)। তবে জেএসএস সমর্থিত বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে নিহতের কথা স্বীকার করা হলেও তাদেরকে নিরীহ গ্রামবাসী বলে দাবী করা হয়।

এ প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্রে কেএনএফ ২৩ জুন বৃহস্পতিবার প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়,

“ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগনের জ্ঞাতার্থে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারার্থে জনগণের পরিত্যক্ত সাইজাম পাড়া (জেএসএস সন্ত্রাসীদের আস্তানা) এবং সম্প্রতি উক্ত পাড়ায় কেএনএফ’র সহিত সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষের সংক্ষিপ্ত কাহিনীঃ

সাইজাম পাড়াটি ছিল বম ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীদের প্রতিষ্ঠিত গ্রাম। এ ছোট গ্রামের প্রথম কারবারী ছিলেন বম সম্প্রদায়ের ননদৌ বম। প্রতিষ্ঠার পর কুকি-চিন জনগোষ্ঠী খিয়াং সম্প্রদায় বসতি গড়তে আসে। পরবর্তীতে বম জনগোষ্ঠীদের অনুগ্রহে এবং তাদের চাষাবাদের সুবিধার্থে কয়েকটি ত্রিপুরা পরিবার ও সবশেষে দুটি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার সহাবস্থান করতে আসে। প্রথম কারবারী মৃত্যূ বরণের পর লালরিনহ বম কারবারীর দায়িত্ব নেন। এ গ্রামটিতে এখনও বমদের একটি গির্জা দণ্ডায়মান আছে। এ পাড়াটির পাশে একটি সুন্দর পুকুর আছে সেটির মালিক নাকি প্রাক্তন চেয়ারম্যান এল. দৌলিয়ান বম যাকে একসময় শান্তিবাহিনীরা অপহরণ করে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল। এই পাড়াটিকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা অনেক বৎসর ধরে নানা ধরণের নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে।

সদ্য এই জনগণের পরিত্যক্ত গ্রামটি ভৌগোলিকভাবে কৌশলগত সুবিধাজনক হওয়ায় জেএসএস সন্ত্রাসীরা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে পূরোপুরি নিজ দখলে আনয়নের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। কেএনএফ’র ইন্টেলিজেন্ট শাখার কমান্ডার লে. সিয়ামপুই-এর রেকর্ড অনুযায়ী এবং সাইজাম পাড়ার কারবারীর ভাষ্যমতে, (কেএনএফ’র সাক্ষাৎকার মতে), জেএসএস সন্ত্রাসীরা এই সাইজাম পাড়া হয়ে প্রায়ঃই যাতায়াত করতো। অনেক সময় এ পাড়ায় অবস্হান করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যে নকশা তৈরী করতো বা বিভিন্ন ফন্দি আঁটতো।

একটি গোপনীয় সূত্র থেকে জানা যায়, এখান থেকে ওমর ফারুক ত্রিপুরা হত্যা এবং সেনাবাহিনীর অফিসার হত্যার পরিকল্পনাও এসব স্হান থেকেই করেছিল। এক সময় উক্ত কারবারী লালরিনহ বম সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপে বাঁধা হয়ে দাঁড়ার কারণে এবং তাদের কুকর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অতঃপর সে ভীত হয়ে সপরিবারে রেয়াংছড়ি মুনরেম পাড়ায় চলে যেতে বাধ্য হয়। বর্তমানে উক্ত সাইজাম পাড়ার কারবারী ভয়ে নিরীহ পরিবারকে রেখে জীবন বাঁচার তাগিদে মিজোরামে চলে যায়। সে সন্ত্রাসীদের ভয়ে মিজোরামের সীমান্তবর্তী গ্রামে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অবশেষে নিকটবর্তী বিলপাড়া জেএসএসপন্হী চাকমা গ্রামে সন্ত্রাসীরা সিভিল ছদ্মবেশে ধীরে ধীরে জাইজাম পাড়া এসে সশস্ত্রভাবে দখলে আনে। সে ব্যাপারটি জনগণ থেকে শুরু করে সবাই জানে। ইদানীং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করে আসছে।

উল্লেখ্য যে, পাড়া প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সন্ত্রাসীদের আস্তানা স্হাপণ আগ পর্যন্ত সূদীর্ঘ বৎসর ধরে নিরীহ জনগণ বসবাস করে আসছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকেই বিভিন্নভাবে গ্রামবাসীদের গ্রাম ত্যাগের জন্যে হুমকি-ধমকি সহ অসহনীয় নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। ফলে, দেড় মাস আগে (গ্রামবাসীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী) তাদের জুমে উৎপাদিত ধান (আড়াই হাজার হাড়ি), গবাদি-পশু ফেলে অন্য গ্রামে চলে যায়। সেইসব নিরীহ জনগণের ধানচাল ও গবাদি পশু যথেচ্ছভাবে জবাই করে খেয়ে আমোদ-প্রমোদ করে আসছে। গ্রামটি দখলের সময় বম জনগোষ্ঠীর একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে বেদম প্রহার করে রক্তাক্ত অবস্হায় রাখে এবং তাকে গ্রাম ছেড়ে না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অবশ্য পরে অসহায় বৃদ্ধ লোকটি গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।

ইদানীং জেএলএ বাহিনীর অসহনীয় উৎপাতে খিয়াং-ত্রিপুরা সহ সবাই গ্রাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। ইদানীং নিরীহ জনগণকে জোরপূর্বক বিতাড়ন করে জেএলএ বাহিনী নিজেরাই দখল করে নিয়ে ট্রেনিং ক্যাম্প স্হাপনের তথ্যটি কেএনএফ নিশ্চিত হওয়ার পর সেটি সুকৌশলে কয়েক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে। কয়েক সপ্তাহ ধরে এ পাড়াটিকে জেএলএ’রা তাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেছে তথ্যটিও স্পষ্ট হলে পর সন্ত্রাসীদের নাশকতার নীল-নকশা বানচালের জন্যেই ঐদিনে কেএনএফ কমান্ডোরা ক্যাম্পটিতে হামলা চালিয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, উক্ত পাড়াটিতে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের যুবকদেরকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে নাকি ট্রেইনিং করাচ্ছিল, তাদের দিয়ে কেএনএফ ক্যাম্পগুলোতে বা টহলরত সেনাবাহিনীদের অতর্কিত হামলা চালাবে বা সরকারের নেতাকর্মীদের উপর বড় ধরনের নাশকতা চালাবে। সে তথ্যটি সন্ত্রাসীরা গোপনে প্রকাশও করেছে আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা হত্যাকান্ড চালিয়েছেও। সাইজাম পাড়াতে যাওয়াও জনগণকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল।

বলা যায় এটি একটি নিষিদ্ধ গ্রাম। কেএনএফ কমান্ডোর টিম লিডার লে. লিয়ানার মতে, জেএলএ বাহিনীরা কয়েকটি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দূর্বল হয়ে অন্য কৌশল অবলম্বন করে সমর্থিত চাকমা গ্রামগুলোতে জনগণের সাথে মিশিয়ে অবস্থান করছে। তাদের সামরিক কৌশল হচ্ছে অত্রাঞ্চলে সন্ত্রাসী কায়দায় নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে চুক্তি বাস্তবায়নের নামে নিরীহ পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগণকে সর্বদা সন্ত্রস্ত করে রাখা। সন্ত্রাসীরা সামরিক সরঞ্জামাদি নিয়ে সামরিক অবস্থায় সিভিলের (গ্রামবাসীর) সাথে অবস্থান করছে সেটা কাপুরুষোচিত কৌশল বলে কেএনএফ মনে করে।

কারবারীর ভাষ্যমতে (প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎকারে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী) , সে (কারবারী) গ্রাম ত্যাগের পর গ্রামসুদ্ধ গ্রামবাসী সবাই গ্রাম ত্যাগ করে। যে বিগত কয়েক দিন আগে (জুন ২১ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায়) সাইজাম পাড়াতে যুদ্ধে নিহত হয়েছে সে তাদের চিনেনি, তার গ্রামবাসীরাও নয়। তবে সে নিশ্চিত হয়েছে যে তারা জেএসএস সন্ত্রাসীদের সশস্ত্রকর্মী। আর যারা সন্ত্রাসীদের সাথে অবস্থান করা মহিলা রক্ষিত আছে তারা সম্ভবত সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক সঙ্গে নিয়ে এসেছিল।

বি. দ্র: কেএনএফ নিশ্চিত করেছে নিহত ব্যক্তিরা সশস্ত্র সন্ত্রাসী। কেএনএফ-এর ইন্টেলিজেন্ট শাখায় যথেষ্ট প্রমান রয়েছে। কাজেই সকল সংবাদ মাধ্যমের সম্মানিত সাংবাদিকগণের প্রতি কেএনএফ-এর অনুরোধ আপনারা সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করুন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন