লামার ফাঁসিয়াখালীর ১৫টির অধিক স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হারগাজা, পুকুরিয়া খোলা, বগাইছড়ি, লাইল্যারমার পাড়া, উত্তর মালুম্যা ও কমিউনিটি সেন্টারসহ ১৫টির অধিক স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে। একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে সেলু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পাচার করছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে খালের দুই পাড়, ফসলের জমি, সড়ক, ব্রিজ, কালর্ভাট ও মানুষের বসতবাড়ি ধসে যাচ্ছে।
সরজমিন পরিদর্শনে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১৫টির অধিক স্থান থেকে কমপক্ষে ৩০টি সেলু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফাঁসিয়াখালী ও ডুলাহাজারার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। বালু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট নেতা এরশাদুল ইসলাম জানান, বালু উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমোদন চাইলে প্রশাসন অনুমোদন দেয় নি। তিনি আরো জানান, স্থানীয় কিছু যুবক এই বালু ব্যবসার সাথে জড়িত। সকলের সাথে সমন্বয় করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেছেন। তার ভাষায়- কক্সবাজার হতে ডুলাহাজারা একটি সিন্ডিকেট লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর বালুকে কেন্দ্র করেই বালু মহল ইজারা ডাক নেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসন বালু মহালের ইজারা না দিলেও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন হতে ডুলাহাজারার বিভিন্ন পয়েন্টে বালু মহালের ডাক নিয়ে মূলত ফাঁসিয়াখালীর ঝিরি, ছড়া এবং ফসলি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন ও পাচার করা হয় বলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লোকজন জানিয়েছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, প্রতিদিন ফাঁসিয়াখালীর হারগাজা, বগাইছড়ি ও কুমারী সড়ক দিয়ে ২ শতাধিক বালির গাড়ি পাচার হয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আইন শৃঙ্খলা কমিটি এবং মাসিক সমন্বয় সভায় বার বার বলার পরেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বর্তমানে বিরান ভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে না পারায় নিজেকে অপরাধী মনে করছেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, গত কয়েক বছরে বালু তোলার কারণে ২৫টি বসতবাড়ি সম্পূর্ন বিলীন হয়ে গেছে। আরো ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে খালপাড়ের ৫০ থেকে ৭০টি বসতভিটাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও বৌদ্ধ মন্দির। যে কোন মুহুর্তে ধসে যেতে পারে বগাইছড়ি ব্রিজ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, লামা উপজেলার কোথাও বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন মহল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযোগ আসার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, শীঘ্রই যৌথ অভিযানের মাধ্যমে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, ফাঁসিয়াখালীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উদ্বেগজনক হারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ এবং অবকাঠামো রক্ষার স্বার্থে বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে তিনি মতামত প্রকাশ করেছেন।