আলীকদমে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা

alikadam current news, Bandarban photo-5

আলীকদম প্রতিনিধি:

লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র মাসের পর মাস বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিলের বোঝা বাড়ালেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলছে না আলীকদমবাসীর। উপজেলায় একটি বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্র থাকলেও একজন নৈশপ্রহরী ছাড়া সেখানে কেউ নেই। সরকারী তরফে বলা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের আমলে বেশী বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।

স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানিয়েছেন, উপজেলায় ইদানিং বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে বেশি। গত কিছুদিন আগেও এভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা যায়নি। বিশেষ করে, সন্ধ্যা পরপরই এখন নিয়মিত লোডশেডিং চলছে। ঘরের গৃহিণী, বিপণি-বিতানের মালিক, স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার যখন বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে তখনই বিদ্যুৎ পায় না।

সন্ধ্যা শুরু হতে না হতেই গৃহিনীদের কেরোসিন কিংবা মোমবাতির খোঁজ করতে হয। সন্ধ্যা পর লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুত গ্রাহকদের অতিরিক্ত জ্বালানীর জন্য বাড়তি অর্থের যোগান দিতে হচ্ছে। এতে তারা অর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। লোডশেডিং আর বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অসহনীয় হযে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

‘সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে যায়। সংসারের রান্নাবান্না ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার দারুণ অসুবিধা হয়’; কথাগুলো বলেছেন গৃহিণী নয়নদেবী তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ভারত মোহন পাড়ার বাসিন্দা। শুধু নয়নদেবী নন। এলাকার ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার একই হাল। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা আর বিদ্যুতের ভেলকিবাজি অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, সন্ধ্যার পর লোডশেডিংয়ের ফলে জেনারেটরের আলো দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয় তাদের। আলীকদম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাহাব উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর বিদ্যুত থাকেনা। লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। জেনারেটর দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে ব্যবসা করতে হয়। এতে করে ব্যবসায়ীদের বাড়তি খরচের বোঝা বহন করতে হচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সন্ধ্যায় পড়তে বসলে বিদ্যুৎ থাকে না। পড়ালেখার অসুবিধা হয়। তাদের মতে, সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুত থাকলে পড়ার সুযোগ হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা। সন্ধ্যার লোডশেডিংএ পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিবাবকরা। লোডশেডিংএ উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকমহল।

সরেজমিন দেখা গেছে, এখন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে অফিস সময়সুচিতে কম্পিউটারে কাজ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক দৈনন্দিন কাজ চরম ব্যাহত হচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় সরকারী প্রাতিষ্ঠানগুলোতে সেবা পেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
লোডশেডিংয়ের তীব্রতায় ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক, বিদ্যুৎগ্রাহক ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

বেসরকারি সংস্থা গ্রীন হিলের কর্মকর্তা মংচিংপ্রু মারমা বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে অফিসের কোনো কাজ করা যায় না। বিদ্যুৎ আসলেও কিছুক্ষণ পর আর থাকেনা। লামা বিদ্যুৎ বিভাগ আলীকদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জনবল সংকট রযেছে লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক মিটার রিডার নেই। এ কারণে সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই গ্রাহক সেবা দিতে হচ্ছে জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানকে।

এ বিষয়ে জানতে লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী এসএম নাজিরের মুঠোফোনে বুধবার বিকেলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের লাইনম্যান মোঃ কামাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লোডশেডিং লামা বিদ্যূৎ বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে না। দোহাজারী ও চকরিয়া সাব স্টেশন লোডশেডিং করে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন