উখিয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্পে চলছে লুটপাট

উখিয়া প্রতিনিধি:

উখিয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্পে অতিদরিদ্রদের নামে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ সরকারি টাকা মহা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি যোগসাজসে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং বিপুল অংকের টাকা ভাগবাটোয়ারা করায় প্রকৃত হতদরিদ্্ররা কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এমন অভিমত সচেতন মানুষের। সরকারি টাকা লুটপাটের মহৎসবের চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করার জন্য দাবি উঠেছে।

এদিকে উখিয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্পের উপকারভোগী দরিদ্রদেরকে না দিয়ে সরকারি বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও আর্থসাৎ করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক বাদি হয়ে সরকারি কর্মকর্তাসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের করেছে। এর পরও এ কর্মসূচিতে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট থামানো যাচ্ছে না।

উখিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি কর্মসৃজন প্রকল্প গত ২ এপ্রিল শুরু হয়েছে। ৪০ দিনব্যাপী এ কর্মসূচিতে ৫টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫শ ৩৪ জন উপকারভোগী রয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য ১ কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজাপালং ইউনিয়নে ৮টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৩১ জন, পালংখালী ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ৪৭৫ জন, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৯টি প্রকল্পে ৩৫০ জন, জালিয়াপালং ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ২৪৩ জন ও রতœাপালং ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্পে কাজ করার জন্য ১৩৭ জন শ্রমিককে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২ এপ্রিল শুরু হওয়া কর্মসৃজন প্রকল্প ইতি মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, প্রতিটি ইউনিয়নে ১ জন করে সরকরি কর্মকর্তাকে টেক অফিসার হিসাবে তদারকি করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, চলমান কর্মসৃজন প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকগণ কোনদিন সঠিক ভাবে কাজ করেনি। এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত টেক অফিসার ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ দায়িত্বপালনে খামখেয়ালি ও দায়সারা ভাবে তদারকি করায় কর্মসৃজন প্রকল্প কোথাও অস্থিত্ব খুজে পাওয়া দুরহ হবে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ। এমনিক উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) পিআইও জুবাইর হাসান ৫টি ইউনয়িনের কোন স্থানে কর্মসৃজন প্রকল্প রয়েছে তাও তিনি জানেন না।

অভিযোগে প্রকাশ উখিয়ায় ২য় পর্যায়ে কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ১ কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকার মধ্যে ২ কিস্তি টাকা প্রদান করা হয়েছে।

উক্ত ২ কিস্তির উত্তোলনকৃত টাকার মধ্যে বিশাল অংকের টাকা উপজেলা কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা ভাগবাটোয়ারা করেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় অবশিষ্ট টাকা কিভাবে ভাগবাটোয়ারা করা য়ায় তারও পরিকল্পনা নিচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ভাগবাটোয়ারার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), ইউনিয়ন পর্যায়ের টেক অফিসার ও স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারগণ যোগ্যতা অনুসারে ৪০ভাগ থেকে শুরু করে সর্বনি¤œ ১০ভাগ হতদরিদ্রদের টাকায় ভাগ বসায়। বলতে গেলে উখিয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ লুটপাটের যেন মহা-উৎসব চললেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখেও রহস্যজনক ভাবে না দেখার ভান করে থাকেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পিআইও জুবাইর হাসান বলেন, উখিয়ায় কর্মসৃজনের অগ্রগতি সর্ম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই অফিসে গিয়ে ফাইল দেখে প্রকল্পের অবস্থান ও বরাদ্দ জানা যাবে। এমনকি হতদরিদ্র উপকারভোগী শ্রমিকরা কিস্তির টাকা পেয়েছে কি না তাও জানাতে পারেনি তিনি।

সচেতন ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, উক্ত কর্মকর্তা রামু থেকে মাসের ২ বার উখিয়ায় এসে অফিসে বসে ফাইলে দস্তখত করে সরকারি টাকার ভাগবাটোয়ারা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে চলে যায়। ফলে উখিয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্প সুষ্ট ভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তিনি কোনদিন পরিদর্শন বা তদারকি করেনি।

সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা বর্তমান সরকারের মহৎ প্রকল্প হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি কর্মসৃজন প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করার জন্য জোরদাবি জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন