দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪

উখিয়া-টেকনাফ নৌকার দুর্গে স্বতন্ত্রের উত্তাপ!

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও দেশের আলোচিত আবদুর রহমান বদির সহধর্মিনী শাহিনা আক্তার এমপি’র নৌকার দুর্গে উত্তাপ ছড়াচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঈগল প্রতিকের নুরুল বশর। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জমে না উঠলেও ইতোমধ্যে ডামি স্বতন্ত্র প্রার্থীর জনসংযোগে নিরুত্তাপ নির্বাচনী মাঠ বেশ জমে উঠেছে। তাদের পাশাপাশি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মুজিবুল হক (সোনালী আঁশ), জাতীয় পাটির লাঙ্গল প্রতীকে নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ওসমান গণি চৌধুরী (মিনার) প্রতীক, ন্যাশনাল পিপলস্ পাটি (এনপিপির) ফরিদ আলম (আম) প্রতীক ও কংগ্রেস প্রার্থী মো. ইসমাঈল (ডাব) প্রতীক নিয়ে।

বিএনপি- জাময়াতসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নেয়ায় উখিয়া-টেকনাফ নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছিল না। শেষ মুহূর্তে গত ২৩ ডিসেম্বর আইনি জটিলতা মোকাবেলা করে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে ভোটের মাঠে। ফলে দ্বিধা-বিভক্তি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। চলছে নানান হিসেব নিকাশ। ইতোমধ্যে বাকবিতণ্ড, কথারঝুলি, নানান ধরনের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা।

রাস্তাঘাটে, হাট বাজারে, দোকান পাটে ও চায়ের দোকানে জমে উঠেছে ভোটের আড্ডা। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ভোটাররা এখন নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বাচাইয়ে মগ্ন।
তাছাড়া বিএনপি-জামায়াত ভোটে না আসলে ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর দুর্গে সুকৌশলে অগোচরে আঘাত হানতে মরিয়া হয়েছে সমর্থিত ভোটাররা। এমন আভাসও নির্বাচনী মাঠে বইয়ে বেড়াচ্ছে। তারা আওয়ামী লীগের নৌকাকে ভালো না বাসলেও ঈগল প্রতীকের পক্ষে কথা বলছেন এমনই চাউর হচ্ছে ভোটের মাঠে।

এদিকে, গত ২৪ ডিসেম্বর টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বলে জানিয়ে উপস্থিত সকলের সমর্থন কামনা করেন। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পর পুরো এলাকায় নির্বাচনী মাঠ চষে ভোটারদের ভোট টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এনিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমুল কর্মীদের মধ্যে এখন নানানমুখী জল্পনা-কল্পনা ও উৎসবের আমেজ বয়ে যাচ্ছে এবং শেষ মুহূর্তে উখিয়া-টেকনাফ আসনে ঈগল প্রতীকের অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে এমন মত সচেতন ভোটারদের। কারণ শাহিন আক্তার বদি আওয়ামী লীগের নৌকা পেলেও কৃষকলীগ, মৎস্য জীবীলীগ ছাড়া মূলধারার আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা তার সাথে নেই। অপরদিকে নুরুল বশর নৌকা না পেলেও দুই উপজেলার ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ মূলধারার আওয়ামী লীগ রাই বেশি তৎপর ঈগল প্রতীকের পক্ষে। এমনকি টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম তার আপন ভাই। তিনি যুবসমাজে বেশ পরিচিতি ও আস্থাভাজন ব্যক্তি। সব মিলিয়ে এখন ভোটের মাঠে নৌকা-ঈগল প্রতীক সমানে সমান। বাকি প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও তাদের পক্ষ ভোটার সীমিত। এমনকি নিজ নিজ এলাকায়ও তাদের গ্রহণযোগ্যতা কম বলে একাধিক ভোটার জানান।

বিশেষ করে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সীমান্তবর্তী ২৯৭নং উখিয়া- টেকনাফ সংসদীয় এই আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনে প্রায় ১২ লাখ মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ে রয়েছেন। ফলে দেশ বিদেশি অনেক ভিআইপিরা এই এলাকাগুলোতে আনাগোনা রয়েছে। তাছাড়া এটি পর্যটন এলাকাও। রয়েছে ৫২ কিলোমিটারের বেশি মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত এলাকা। তাই এই আসনে বিজয়ী হওয়ার জন্য সকল প্রার্থীরা মরিয়া হলেও মূলত এখন দুই প্রার্থীর সমর্থক ও ভোটার দের কে বেশি উৎসবমুখর দেখা যাচ্ছে। তাদের একজন হলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির সহধর্মিনী ও সংসদ সদস্য শাহিনা আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল বশর। এই দুই জনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফের তৃণমূলেও এই দুই প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর (ঈগল) বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। কেননা, আমি একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং আজীবন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। সুখে-দুঃখে দলীয় নেতা কর্মী ও গরিব অসহায় মানুষের পাশে থেকে যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি। আশা করি জনগণ আমাকেই নির্বাচিত করবেন।

নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় ও সভায় সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি বলেন, আমি দু’বারের নির্বাচিত এমপি ও আমার সহধর্মিনী বর্তমান এমপি শাহীন আক্তার দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। সারা বছর গরিব-অসহায় মানুষের সেবায় নিয়োজিত থেকে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কাজ তৃণমুলে পৌঁছে দিয়েছি।

ইনশাআল্লাহ জনগণ আওয়ামী সরকারের উন্নয়নে বিশ্বাসী বিধায় এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে উখিয়া-টেকনাফ থেকে বিপুল ভোটে জয় লাভ করবো। সবশেষে নিরুত্তাপ ভোটের হাওয়া প্রত্যাঞ্চলে বইছে। ফলে চলছে বিভিন্ন প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। আবার অনেকে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সাইনবোর্ড বানিয়ে স্থানীয় নির্বাচনে সুবিধা নেওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। যাহোক, এই উত্তাপ আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফলাফলই বলে দিবে সাধারণ ভোটারদের পছন্দের এমপি কে?

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়া, টেকনাফ, নৌকা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন