একযুগ পর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আসছেন কেন্দ্রের এক ডজন নেতা: নেতাকর্মীদের উচ্ছাস

আওয়ামী লীগ

ওমর ফারুক হিরু:

দীর্ঘ এক যুগ পরে কক্সবাজারের আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে এ উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্রমতে, গত ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল। সরাসরি ভোটে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম একেএম মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সালাহউদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের ২৭ মে একেএম মোজাম্মেল হকের মৃত্যু হলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। কিন্তু বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে তিনি ওই পদ থেকে অপসারিত হন। সেই থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন দ্বিতীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট একে আহমদ হোসেন।

এরপর অন্তত ১০ বারেরও বেশী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নানা অজুহাতে তা না হলেও এবার ৩১ জানুয়ারি সম্মেলনের তারিখটি অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছে।

ইতিমধ্যে কক্সবাজার শহরের ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ, পোষ্টারে ভরে গেছে। নিজেদের বিভিন্ন পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে চলছে এ প্রচারণা। একই সঙ্গে প্রার্থীরা বিভিন্ন কাউন্সিলদের কাছে কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনাও শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৩১ তারিখের সম্মেলন ও কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রের অর্ধ ডজন নেতা। যাদের মধ্যে থাকবেন, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুরসহ অন্যান্য নেতা।

এ সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আতংকিত রয়েছেন আওয়ামীলীগের কিছু সিনিয়র নেতা। তারা বলছেন, ওই সম্মেলন ও কাউন্সিলকে কেন্দ্রে করে একটি মহল অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে নীল নকশা তৈরী করছে। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা কয়েকজন আওয়ামীলীগ নামধারীরাই এ ষড়যন্ত্র করতে পারে বলে মন্তব্য করছেন। আওয়ামীলীগের সুনাম ক্ষুণ্ন করা ও জেলা আওয়ামীলীগকে কেন্দ্রের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করছে বলে তাদের ধারণা।

জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সভাপতি এডভোকেট একে আহম্মদ হোসেন বলেন, সম্মেলন ও কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মেনে নেওয়া যাবে না। ওই দিন দলের বা সহযোগী দলের অথবা অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতা যদি বিশৃংখলতা সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

দীর্ঘ এক যুগ পরে এই সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আইন শৃংখলা বাহিনী। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবিও প্রস্তুত থাকবে বলে জানা যায় সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরা জানিয়েছেন, পুরো কক্সবাজার জুড়ে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্মেলনে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য পর্যান্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে, ইতিমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন ৫ জন। এরা হলেন, জেলার সহ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সালা উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এবং চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাফর আলম। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ৩ জন। এরা হলেন, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুবর রহমান, জেলা কমিটির সদস্য রাশেদুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মার্শেদুল হক রাশেদ।

জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১১ জন কেন্দ্রীয় নেতা
জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ জানুয়ারী। এতে অংশ নিতে কক্সবাজার আসার কথা রয়েছে ১১ জন কেন্দ্রীয় নেতার। তাদের মধ্যে ৪ জন মন্ত্রী এবং ৩ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ দৌলত ময়দানে ৩১ জানুয়ারী সকাল ১০ টায় সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা থাকবেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহার উ শৈ সিং, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাবলু, কেন্দ্রিয় সদস্য মির্জা আজম এমপি, সুজিত রায় নন্দী ও আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।

সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. একে আহমদ হোছাইন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ সিআইপি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, কক্সবাজার, সম্মেলন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন