কক্সবাজারে হঠাৎ তীব্র গরম, ভয়াবহ লোডশেডিং

লোডশেডিং

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কক্সবাজার জেলাব্যাপী হঠাৎ তীব্র গরম আর ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অস্থির হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমের প্রখরতা প্রাকৃতিক হলেও দিনে রাতে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে জনগণ চরম বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

তবে বিদ্যুৎ অফিস বলছে, চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে। অন্যদিকে এই মুহুর্তে সর্বোচ্চ গরম পড়ছে কক্সবাজারে। এই পরিস্থিতি সহসাই কমছে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

তীব্র গরমে নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালসহ প্রাইভেট ক্লিনিকে আগত রোগেিদর প্রচ- ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। যারা গরম জনিত রোগে আক্রান্ত বলে জানা গেছে।

শহরের তুলনায় জেলার অধিকাংশ উপজেলায় দিনরাত ২৪ ঘন্টা মিলে মাত্র ৩ ঘন্টারও কম সময় বিদ্যুৎ থাকে। বর্তমানে চলমান এইচএসসি/আলিম পরীক্ষার্থীরা চরম কষ্টে পড়ালেখা করছে বলে একাধিক পরীক্ষার্থীরা জানান।

গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় চকরিয়ায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ মোমবাতি জ¦ালিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভও করেছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরম পড়ছে যা অস্বাভাবিক তার উপর বিদ্যুৎ বিভাগ যেন জনগণের সাথে তামাশা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, গত ২ দিনে ৪৮ ঘণ্টায় খুব বেশি হলে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল বাকি সব সময় বিদ্যুৎ ছিল না। সব মিলে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না মাঝে মাঝে আসে। এই গরমে এভাবে লোডশেডিং হয় তাহলে মানুষ বাঁচবে কিভাবে। তিনি আরো বলেন, আর বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করলে সব সময় ব্যস্ত পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে ধরলে উল্টো ফোনে হাসাহাসি করে। মনে হয় যেন তামাশা করছে।

টেকনাফের আমিন নামে এক এনজিও কর্মী বলেন, দিনে যেমন তেমনভাবে চলে। তবে রাতে বা গভীর রাতে লোডশেডিং কেন হয় এটা বুঝি না। এতে করে ঘরের ছোট শিশুরা পর্যন্ত প্রচ- কান্নাকাটি করে উঠে। আমিন দাবি জানিয়ে বলেন, যদি লোডশেডিং দিতে হয় তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময় দিক। সেটা ধারাবাহিক ৩/৪ ঘণ্টা হলেও আপত্তি নেই। তবে আধ ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং এটা মেনে নেওয়া যায় না।

কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার আরফাত বলেন, টেলিভিশনে প্রায় বলছে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে। আবার উচ্চ মূল্য দিয়ে ভারত থেকে বিদ্যুৎ এনেছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরী হচ্ছে সে হিসাবে বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে। বর্তমানে আমরা বর্ধিত বিদ্যুতের মূল্য দিচ্ছি তাহলে কেন এই ঘন ঘন লোডশেডিং? তারপরও আমাদের দাবি থাকবে লোডশেডিং দিলে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় লোডশেডিং দেওয়া হউক। এভাবে ঘনঘন নয়।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কক্সবাজারে তাপমাত্রা বেশি পড়ছে। গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন ছিল ৩৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং এই গরম সহসাই কমছে না বলেও জানান তিনি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রার পরিবর্তন হবে বলে জানান তিনি। এদিকে তীব্র গরম ও লোডশেডিং যে বিপর্যস্ত মানুষের উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আছে নানান ধরনের রোগব্যাধি। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

এ ব্যাপারে আলাপকালে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, গরমে শিশুদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা রাখতে হবে। তাদের খাবার গোসলসহ সব বিষয়ে ভালভাবে নজর দিতে হবে। এ কারণে হঠাৎ গরম বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকদিনে প্রচুর শিশু রোগী আসছে। এখনো অনেক রোগী ডায়রিয়া ও ঠা-া জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন