কক্সবাজারে ৯ মাসে ৯১২ জন নারী নির্যাতনের শিকার

fec-image

নারী নির্যাতন

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সরকারী-বেসরকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নানাভাবে প্রচারণা চলছে। এছাড়া সক্রিয় রয়েছে প্রশাসন। এর পরেও প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির ঘটনা। যার ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের সাথে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে উন্নয়নের ক্ষেত্রে। এমনটাই বলছেন সচেতন মহল।

কক্সবাজারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৯১২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে (রেজিস্টারভুক্ত)। এর মধ্যে বিভিন্ন নারী সহায়তা কেন্দ্র থেকে সহযোগিতা চেয়েছেন ২৫৩ জন। এসব নির্যাতনের মধ্যে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, নির্যাতন করে হত্যা, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করে হত্যার মতো ঘটনাই বেশি রয়েছে।

এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নানাভাবে ব্লাকমেইলিং এবং নির্যাতন। এছাড়া রয়েছে বাল্য বিয়ে ও বাল্য বিয়েতে বাধ্য করা। এসব তথ্য পাওয়া যায়, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, নারী সহায়তা কেন্দ্র, থানা ভিকটিম সার্পোট সেন্টার, ব্রাক আইন সহায়তা কেন্দ্র এবং সরকারী আইন সহায়তা কেন্দ্র থেকে।

এছাড়া কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গত ২১ জুলাই থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৩০ টি নারী নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে যার মধ্যে ১০টি যৌন হয়রানি আর অন্যগুলো ব্ল্যাকমেইলিং, শারীরিক নির্যাতন। ব্রাক, এইচআরএলএস কর্মসূচির তথ্যানুযায়ী গত নয় মাসে মোট ২৪৪টি নারী নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে। যার মধ্যে যৌন হয়রানির অভিযোগ ২১টি। বাকীগুলো ব্ল্যাকমেইলিং, শারীরিক, পারিবারিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ।

জরিপে আরও দেখা যায়, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও যৌন হয়রানির যে সংখ্যক ঘটনা ঘটে তার মাত্র ১০ শতাংশ প্রকাশ পায়। বাকীগুলো প্রকাশ পায়না।

এ ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানী মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (সমাজ সেবা অধিদপ্তর) বলেন, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাপনায় লোক লজ্জার কারনে অনেক নারী বা তার অভিভাবক প্রকাশ করতে চাননা যৌন হয়রানির বিষয়। এছাড়া অনেক সময় সঠিক বিচার না পাওয়া অথবা চারদিকে প্রচার হওয়ার ভয়েও যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ হয়না। আরেকটি বড় সমস্যা হল, বেশিরভাগ যৌন হয়রানি কিন্তু নিকট আত্মীয় বা পরিচিত জনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে ভয় অথবা লজ্জায় অনেকে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ করে না।

কলেজ শিক্ষক শামশুল আলম বলেন, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি ইন্টারনেটে নগ্ন ছবি ছেড়ে দিয়ে চাঁদাবাজিরমত ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া এসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। পথে-ঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থেকে শুরু করে কর্মস্থল পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই নারীরা নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই অপরাধ বন্ধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বন্ধ হবে যৌন হয়রানি।

নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রেসক্লাব (কক্সবাজারে) অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ‘যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক’ এর প্রতিনিধিরা বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রশাসনের আরো কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে, যৌন হয়রানির ঘটনার ক্ষেত্রে কালক্ষেপন না করে দ্রুত মামলা নিতে হবে আর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

এছাড়া আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যেমে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রতিনিধিগণকে যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন সর্ম্পকে সচেতনতামূলক প্রচার ও প্রচারণায় উদ্যেগ নিতে হবে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ ব্যাপারে প্রচারনা চালাতে হবে। এছাড়া যৌন হয়রানি ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পাড়ায়-মহল্লায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর কমিটি গঠন করতে প্রশাসনের পক্ষ হতে সক্রিয় উদ্যেগ গ্রহণ করতে হবে। আর সকলকে এগিয়ে আসতে হবে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন