কক্সবাজার জেলার ভূমি অফিসগুলো যেন টাকা বানানোর কারখানা

Cox Pic

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

পর্যটন জেলা কক্সবাজারের সবকটি উপজেলার ভুমি অফিসগুলো যেন টাকা বানানোর কারখানা চারিদিকে টাকার ছড়াছড়ি ও দুর্নীতির আখড়া সর্বত্র চলছে কানুনগোসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের টাকা বানানোর সিন্ডিকেট । ফলে নামজারী, ভুমি রেজিস্ট্রি, খাসজমি বন্দোবস্তো, ভুমি সংক্রান্তসহ সকল কাজে হয়রানীর শিকার হচ্ছে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

ভুমি নামজারীর ক্ষেত্রে সরকারি ফি ২৩২ ও কোর্ট ফি বাবদ ২০ টাকা খরচ হলেও এক্ষেত্রে প্রতিটি নামজারীর জন্য বর্তমানে জেলা ও উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক বিভিন্ন ক্যাটাগরির নামজারী মামলায় ঘুষের হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ নেই এ ধরনের মামলায় কয়েক হাজার টাকা, অভিযুক্ত মামলায় ৪০-৫০ হাজার টাকা এবং ১৯৯০ সালের আগের দলিল হলে নামজারী মামলায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। নামজারীর ক্ষেত্রে সরেজমিন তদন্তের নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস কর্মকর্তারা টেবিলে বসেই কাগজে কলমে তদন্ত কাজ শেষ করেন বলে জানা যায় । তবে তার জন্য মামলার বাদীকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু তদন্ত নয় নামজারী সংক্রান্ত সকল কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও মিস কেসের ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় ভূমি অফিসগুলোতে।

ঘুষের বিনিময়ে ত্রুটিপূর্ণ দলিল কিংবা মূরসী খতিয়ান বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া নামজারী করার কারণে এমনও দেখা গেছে একই কর্মকর্তার স্বাক্ষরে নামজারী হয়ে পরবর্তীতে মিস কেস দায়ের হলে ওই নামজারী মামলার সৃজিত খতিয়ান বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ঘুষের কারণে ভূমি অফিসগুলো সৃষ্ট অরাজক পরিস্থিতিতে বর্তমানে কখন কার জমি নামজারী করে কে নিয়ে যাচ্ছে তার হিসেব নেই। আর এ নিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন এলাকার সাধারন মানুষ। কানুনগো, সার্ভেয়ার, তহসিলদারসহ পিয়ন পর্যন্ত টাকা দিলে কাজ করে আর না হয় ফাইল আটকে রাখে। আর যারা টাকা দেয় তাদের আগে করে দেয়। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার অনেক ভুমি অফিসে অহরহ দুর্নীতির কারণে অনেককে বদলি করেছেন। আর কিছু কর্মকর্তা একই অফিসে ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্তও একই স্থলে চাকরি করারও অভিযোগ উঠেছে। এ সুবাদে ভূমি অফিসে ঘুষের এ রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন অফিসের তহসিলদার, কানুনগো, সার্ভেয়ার ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে হযবরল অবস্থা। কেউ অভিযোগ করছেন তিন বছরেও নামজারী হয়নি। কেউ অভিযোগ করছেন নামজারী করতে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। সরকারিভাবে একটি নামজারী মামলার নির্ধারিত সময় ৪৫ দিন বা দেড় মাস হলেও রহস্যজনক কারণে অনেকে দিনে দিনে নামজারী করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে নামজারী করতে আসা অধিকাংশের অভিযোগ মোটা অংকেরর ঘুষ ছাড়া ভূমি অফিসগুলোতে কোন কাজ হয় না। বিশেষ করে কানুনগো টাকা ছাড়া কারও সাথে কথাও বলে না। তার সাথে প্রয়োজনে কথা বলতে হলে আলাদা নিয়ে গিয়ে বা বাসায় গিয়ে কন্ট্রাকের মাধ্যমে কাজ করতে হয় এমন অভিযোগ উঠেছে কানুনগোর বিরুদ্ধে। একই সাথে তামিলকারক হিসেবে সবুজ নামের এক কর্মকর্তা ১০ বছর ধরে টেকনাফে চাকরী করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে তাদের সাথে রয়েছে শক্তিশালী দালাল চক্র। এরমধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তি, পুলিশ, কথিত সাংবাদিকসহ একশ্রেনীর দালাল চক্র ।

অপরদিকে রামু ইউনিয়ন ভুমি অফিসে এমএলএসএস পদে এমনও কর্মরত আছেন দীর্ঘ এগার বছর ধরে। তিনি একজন পিয়ন হলেও কাজ করেন ভুমি অফিসারের মত। এক প্রকার জিম্মি তার কাছে রামুর সর্বস্তরের মানুষ। সে এগার বছরের কর্মজীবনে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়ে গেছে। তার রয়েছে শহরের ঝাউতলায় সালেহ নুর নামে একটি কটেজ। সম্প্রতি দুই মাস আগে রামু ভুমি অফিস থেকে অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করলেও তিনি রয়ে গেছেন আগের মতই। তিনিই করে দেন সব কাজ।

ভূমি অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে আশা করি অচিরেই বন্ধ করা যাবে সকল অনিয়ম।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন