কাউখালীতে ৫ম দিনে মিললো নিহতদের বাকী অর্থ ও ত্রাণের চাল

কাউখালী প্রতিনিধি:

দূর্যোগের ৫ম দিনে শনিবার কাউখালীতে পাহাড় ধ্বসে নিহত ২১জনের স্বজনেরা সরকার ঘোষিত ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা পেয়েছেন। তবে এলাকায় না থাকায় ঘাগড়া বাজার এলাকার নসুমা বেগমের স্বজনেরা এ সহায়তা নিতে পারেননি। আহত ৫ জনকেও ৫ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।

শনিবার দুপুরে ত্রাণ শাখার প্রধান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কমল বরণ সাহা তার কার্যালয়ে এসব ত্রাণ তুলে দেন। এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে নিহত ও আহতদের স্বজনদের খবর দিয়ে জড়ো করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলার ৪ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

এদিকে ঘটনার ৫ম দিনেও সরকারের উর্দ্ধতন মহল থেকে নিহত ও আহতদের পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

স্বজনদের মনে স্বস্তি: নিহত ব্যক্তিদের মাথাপিছু ঘোষিত সরকারি বরাদ্ধের বাকী টাকা ও ৩০ কেজি করে ত্রাণের চাল পেয়ে খুশি হয়েছেন বাকছড়ি এলাকার দিনমজুর ফুলমোহন চাকমা (৪৫)। তিনি বলেন স্ত্রী মনি মালা চাকমা (৫৫) ও মেয়ে বৃষ মনি চাকমা (১১) কে আর ফেরত পাবোনা। খাবার নাই, কাপড় নাই, কাজও নাই। দুটি ঘরই ভেঙ্গে গেছে। প্রতিবেশিদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। আরো ৪ ছেলে নিয়ে কষ্টে পড়ে গেছি। ৫দিনেও কেউ দেখতে যায়নি। এ সহায়তা পেয়ে কিছুটা স্বস্তি লাগছে।

কাশখালীর লেইঙ্গাছড়িতে নিহত হওয়া স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও দুই ছেলে ইসহাক ও মনিরের বাবা আব্দুল রশিদ (৭০) বলেন, এ বিপদের দিনে টাকা আর চাল দিয়ে সরকার এ গরীবের পাশে দাঁড়িয়েছে, আল্লাহ সরকারের ভালো করুক। স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ঘিলাছড়িতে নিহত দবির উদ্দিন (৮০), ও দবির উদ্দিন এর স্ত্রী  খোদেজা বেগম (৭০)’র মেয়ে জরিনা বেগম (৪২) ও।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কমল বরণ সাহা জানান, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ৪ দিনেও কাউখালীতে ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা না পাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন। শনিবার বিকাল ৪টার মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা না পেলে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা গ্রহণ করা হবেনা বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ফলে শনিবারই উপজেলার চার ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তার কার্যালয়ে জমা হয়েছে।

রাত আটটায় পার্বত্যনিউজকে পিআইও জানান, তালিকার মধ্যে সম্পূর্ণরুপে বিদ্ধস্ত বাড়ির তালিকায় স্থান পেয়েছে বেতুবনিয়া ইউনিয়নে-৩৩, ফটিকছড়ি-৩৫, ঘাগড়া-১৩০ ও কলমপতিতে-৩৬টি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেতুবনিয়া ইউনিয়নে-৬১, ফটিকছড়ি-৭৫, ঘাগড়া-৬০০ ও কলমপতিতে-২২৭টি। এছাড়া সম্পূর্ণরুপে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার রয়েছে ৯০০টি। দুর্যোগে ২১জন নিহত হলেও আহতের সংখ্যা ৫ থেকে বেড়ে শনিবার পর্যন্ত ১৫ জন হয়েছে। এসংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

শনিবার পর্যন্ত ৫ দিনে দূর্তগ এলাকায় কোন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি। এমনক সরকারি কোন কর্মকর্তাকেও দেখতে পাননি বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন। তবে কাউখালী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত, রাঙামাটি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সুমনী আক্তার ৪র্থ দিনে শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটি থেকে কাউখালী আসেন। নির্বাচনী এলাকা হলেও রাঙামাটির সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারও যেমন আসেননি কাউখালীতে তেমনি সরকারের দায়িত্বশীল কোন ব্যক্তিও পরিদর্শণে আসেননি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কাউখালীতে পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে আসবেন বলে উপজেলা বিএনপি সভাপতি জসিম উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এসময় মির্জা ফখরুল ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা দেবেন বলেও জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন