বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে কতো বয়স লাগে?
নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা:
কদরের নেছা’র বয়স ১‘শ ১৭ বছর আর করফুলের নেছার বয়স ৯১ এর কোটা পেরিয়েছে। স্বাধীনতার দুই বছর পরই স্বামীকে হারিয়ে বিধবার শাড়ী পড়েছেন কদরের নেছা। আর দুই মাস আগে ১’শ ২৯ বছর বয়সে মারা গেছেন করফুলের নেছার স্বামী মনু মিয়া। বয়সের ভারে দুজনেই ন্যুয়ে পড়লেও তাদের কপালে এখনও জোটেনি সরকারি সহায়তা বয়স্ক ভাতার কার্ড।
মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের এ দুই বৃদ্ধা সরকারি সুযোগ সুবিধার বাইরে আছেন দিনের পর দিন। তাদের সাথে কথা বলার পর ঘুরেফিরে একটি প্রশ্নই উকি দিচ্ছে বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে কতো বছর লাগে?
বয়স্ক ভাতার কার্ড কেন পাননি জানতে চাইলে আমতলী ইউনিয়েনের নতুনপাড়ার বাসিন্দা শতোর্ধ কদরের নেছা বলেন ‘কইলেও মেম্বররা কেউ কিছু আমারে দেয়না’, কতো কইছি কেউ আমার কতা হোনেনা’ (বললেও মেম্বাররা আমাকে কিছু দেয়না, কতো বলেছি কেউ আমার কথা শুনেনা)। শুধু বয়স্ক ভাতার একটি কার্ডই নয় সরকারি সাহায্যের কিছুই পৌঁছায়নি তার ঘরে। তাই তার কথা থেকে ক্ষোভ ঝড়লো। বললেন, স্বাধীনতার দুই বছর পর স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়েছেন। ঠাঁই হয়েছে একমাত্র ছেলের ঘরে। সেই ছেলেও বছর কয়েক আগে মারা গেলে ছেলের ঘরের একমাত্র নাতীনের অভাবের সংসারেই ঠিকানা হয় শতোর্ধ বৃদ্ধা কদরের নেছা’র।
হাঁটুর ওপর ভর করে হাঁটাচলা করতে পারলেও খুব বেশি হাঁটাচলা বা কোনো কাজ করতে পারেন না। বেশ ক’বছর যাবত বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। এমন পরিস্থিতিতে নাতীনের অভাবের সংসারে অনেকটা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে এই বৃদ্ধার। অথচ এখনও তার কপালে জোটেনি বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য তিনি একটি কার্ড চান।
আমতলী ইউনিয়েনের আবু তাহের সর্দার পাড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধা করফুলের নেছা’র জীবনে বয়সের সাথে সাথে যোগ হয়েছে অন্ধত্ব। চার বছর আগে চোখেরও দৃষ্টি হারিয়েছেন করফুলের নেছা। এখন পুরোপুরি পরনির্ভরশীল এ বৃদ্ধা কারো সাহায্য ছাড়া ঘর থেকেও বের হতে পারেনা। অর্থাভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেননি তার ছেলে বর্গাচাষী মো. আলী হোসেন।
দুই ছেলে সন্তানের মা করফুলের নেছার বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জমির আলী মিস্ত্রি তেমন একটা খোঁজ খবর নেন না বৃদ্ধা মায়ের। ফলে দৃষ্টিহীন বৃদ্ধা মায়ের ঠিকানা হয়েছে ছোট ছেলে মো. আলী হোসেনের অভাবের সংসারে। তবে বড় ছেলের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা ক্ষোভ নেই এ মায়ের। বয়সের সাথে সাথে নানা অসুখ-বিসুখ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। কিন্তু ন্যুনতম চিকিৎসাটুকুও করানও যাচ্ছেনা অর্থাভাবে এমনটাই জানিয়েছেন তার ছেলে মো. আলী হোসেন।
তার বৃদ্ধা মা আর কতো বয়স হলে বয়স্ক ভাতা পাবেন এমন প্রশ্ন তার ছেলে মো. আলী হোসেনের। তিনি বলেন, মেম্বার-চেয়ারম্যান সবসময়ই বলে করে দিবে, তবে এটা কবে জানিনা। শুধু বয়স্ক ভাতা নয় কোন সরকারি সহায়তাই পৌঁছেনা এ পরিবারে এমন অভিযোগও জানালেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় মেম্বার সঞ্জীব শর্মা বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ পাইনি। তবে বরাদ্দ পেলে তাদেরকে কার্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান এ তৃনমুল জনপ্রতিনিধি।
তবে আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গনি বলেন, এমন ঘটনা আমার অজানা। তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার অধিকার রাখে। তবে তিনি, সামনের বরাদ্দেই তাদেরকে কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এবিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, এতো বছর বয়সে বয়স্ক ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য সব সেফটি নেটের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।