জাল ভোট, নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে কাউখালীতে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন

ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সংঘর্ষ আহত ৭
আওয়ামীলীগ-২, ইউপিডিএফ-১ প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত
Kawkhali Election News pic
কাউখালী প্রতিনিধি :
জালভোট, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ এবং বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে কাউখালীতে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন এক নারীসহ কমপক্ষে ৭ জন। শনিবার উপজেলার তিন ইউনিয়ন বেতবুনিয়া, ঘাগড়া, ও কলমপতি ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। সদর এলাকায় সরকার সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন আর দূর্গম এলাকায় আঞ্চলিক দুই দলের কেন্দ্র দখলের কারণে সাধারন ভোটারেরা দিনভর ছিলেন আতংকে। এর মধ্যে কলমপতির একটি কেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক বিএনপি প্রার্থী ও সরকার দলের নারী সদস্য প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিকেলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ন্ত্রন কক্ষ থেকে ফলাফল ঘোষণার আগ মূহুর্তে দুই মেম্বার প্রার্থীর ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে কাউখালীর দূর্গম ঘিলাছড়ি গ্রামে পাহাড়ী বাঙ্গালী সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে নারীসহ আহত হন ৩জন। তাদের কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এখবর কাউখালী সদরে পৌঁছলে বাঙ্গালীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় উত্তেজিত বাঙ্গালীরা কচুখালী এলাকায় উপজাতীয়দের কয়েকটি দোকান ভাংচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা ঘিলাছড়ি যাওয়ার সময় পথেমধ্যে প্রায় এক ঘন্টা তাদের গাড়ী অবরুদ্ধ করে রাখে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। ভাংচুর করা হয় পুলিশের গাড়ী। সংঘর্ষের সময় ঘিলাছড়ি কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসারসহ দায়িত্বরত অন্যান্য কর্মকর্তাদের বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখে সন্ত্রাসীরা। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। আহতরা হলেন, মেহের আলী (৩০), আমজাদ আলী (৩৫), জাহানারা বেগম (৪৫)।

Kawkhali UP Election News Pic-2

তবে দিনশেষে প্রাপ্ত ফলাফলে আওয়ামীলীগ সমর্থিত দুইজন এবং ইউপিডিএফ মনোনীত এক প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত। এরা হলেন কলমপতি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান ক্যজাই মারমা। তিনি পর পর চারবার নির্বাচিত হন। বেতবুনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত খইচাবাই তালুকদার। ঘাগড়া ইউনিয়নে ইউপিডিএফ সমর্থিত জগদিস চাকমা (আনারস) অবশ্য আগেই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী ধন কুমার চাকমা নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে সকাল সাড়ে দশটার দিকে বেতবুনিয়া ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শওকত হোসাইন প্রশাসনের উপস্থিতিতেই সরকারদলীয়দের কেন্দ্র দখল, কর্মী সমর্থকদের হুমকি ও জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ তুলে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা না থাকায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। একই কারণ দেখিয়ে বেলা বারোটার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ঘাগড়া ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খোরশেদ আলম।

প্রিজাইডিং অফিসার নিজে দুই প্রাথীর পোলিং এজেন্টকে বেরকরে দেন এমন অভিযোগ পেয়ে গণমাধ্যমকমীরা সকাল দশটায় কলমপতি ইউনিয়নের বড়ডলু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান। সেখানে উপস্থিত বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রাথী জাহাঙ্গীর হোসেন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা নাজমা আক্তারের স্বামী কাউখালী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, ভোট শুরু হওয়ার পূর্বে প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিধু রঞ্জন চাকমা তাঁদের এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার তাঁর বিরুদ্ধে প্রত্রিকায় লিখে দেয়ার জন্য বলেন। ঐ কেন্দ্রে আরো দেখা যায় একাধিক কর্মী একজন প্রার্থীর ব্যাজকার্ড বুকে ঝুলিয়ে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার সদস্যদেরকে আপ্যায়ন করাচ্ছেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের একজন মহিলা সদস্য প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে বসে বিভিন্ন কাজ তদারকি করছেন।

দুপুর একাটার সময় পোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেন শামীমের সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে রফিকুল ইসলাম ও তার সহোদর দিদারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম বাদশা এবং দেলোয়ার হোসেন শামীম ও তার সহোদর মোঃ দিদার আহত হয়েছেন। প্রায় আধঘন্টা ব্যাপী চলে এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। পরে পুলিশ ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা হলেন, কলমপতি ইউনিয়নে কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান ক্যজাই মার্মা (নৌকা) ৫৭১৮ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জাহাঙ্গীর হোসেন (ধানের শীষ) ২৭২২ ভোট। বেতবুনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ সমর্থিত খইচাবাই তালুকদার (নৌকা) ৯৫৪৫ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী শওকত হোছাইন (ধানের শীষ) ৩৪০ ভোট। ঘাগড়া ইউনিয়নে ইউপিডিএফ সমর্থিত জগদিস চাকমা (আনারস) ৫৭১৮ ভোট, নিকতম প্রতিদ্বন্ধী শান্তি মনি চাকমা (জেএসএস) ৩৮৪২ ভোট। বেলাল উদ্দিন (নৌকা) ২৮৫৬ ভোট।

কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া আখতার জানিয়েছেন, কাউখালী উপজেলার চারটি ইউনিয়নে নির্বাচন চলাকালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল মোতায়েন ছিল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন