থু থু মারা নিয়ে এলাহিকাণ্ড

মোবারক হোসেন, লক্ষ্মীছড়ি:

ঘটনার সূত্র এক মহিলাকে থুথু মারাকে কেন্দ্র করে। ঘটনাটি ৯ আগস্ট ঈদের দিন শেষ বেলায়। মেজর পাড়া লক্ষ্মীছড়ি-মানিকছড়ি সড়কের পাশে জুর্গাছড়ি এলাকার মোস্তফা মিস্ত্রীর মেয়ে সামছুন্নাহার (২৮) কে মটরসাইকেল আরোহী মগাইছড়ি গুচ্ছ গ্রামের ইউসুফ মোল্লার ছেলে মনির হোসেন(২৮), খলিল মোল্লার ছেলে শহিদুল ইসলাম(২৬) ও মো: হান্নান এর ছেলে জুলহাস (২২) এর মধ্যে যে কেউ থুথু মারে বলে অভিযোগ। কথা কাটা কাটির এক পর্যায় মেয়ে পক্ষের লোকজন ৩যুবককে ধরে মারধর করে বলে অভিযোগ করা হয়। তবে মেয়ে পক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকারও করে। ঘটনাটি মিমাংসার জন্য চেষ্টাও করা হয়।

এদিকে অপপ্রচার চালানো হয় জুর্গাছড়ির মানুষ মাগাইছড়ি লোকজনকে মেরেছে খবর পেয়ে দলে দলে লোক লাঠি-শোঠা নিয়ে জুর্গাছড়ির দিকে আসতে থাকে। অনেকে অবশ্য বাঁধাও দেয়। ততক্ষনে ঘটনা ঘটে যায়। হামলা চালানো হয় জুর্গাছড়ি বেশ কয়েকটি বসত বাড়িতে। বাদ পরেনি মসজিদ ঘরও। আহত হয় নারি পুরুষসহ অনন্ত ১০জন। অপর পক্ষের মগাইছড়ি গুচ্ছ গ্রামের ২/৩জন আহত হয়ে মানিকছড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। উত্তাপ ছড়িয়ে পরে পাড়া-মহল্লায়। সুবিধাবাদীরা সুযোগ নেয়। ঘটনার নানা রুপ দিয়ে এলাকায় এলাকায় দাঙ্গা ছড়ানোর চেষ্টা করে কিছু দুষ্ট মানুষ।

এ ঘটনায় রাতেই মেয়ের বাবা মোস্তফা মিস্ত্রী একটি লিখিত অভিযোগ করলে সাধারণ ডাইরী রেকর্ড ভুক্ত করে লক্ষ্মীছড়ি থানা পুলিশ। পর দিন ১০ আগষ্ট ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। হাসপাতালে রোগী দেখতে আসা মগাইছড়ির মো: সাইফুল ইসলামকে রাতের ঘটনায় জড়িত ছিল এই অভিযোগে জুর্গাছড়ির জাহাঙ্গির আলম উপস্থিত লোকজনের সামনেই লাঠি নিয়ে মারধর শুরু করে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে উপজেলা সদরেও। প্রতিবাদে মগাইছড়ির লোকজন বাস থামিয়ে লক্ষ্মীছড়ির যাত্রীদের উপর হামলা চালায়। এতে কৃষ দাশ (৩০) নামে বজারের ব্যবসায়ী মারাত্মক আহত হয়ে লক্ষ্মীছড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়।

ওই রাতেই আরো ২জনকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে এটি চাঁদাবাজির ঘটনা ছিল বলে পুলিশ জানান। এ ঘটনা এখানে থেমে নেই। আতংক ছড়িয়ে পরে পুরো এলাকায়। কেউ কারো এলাকায় যেতে সাহস পাচ্ছে না। পুলিশ ও প্রশাসন থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বার বার উদ্যোগ নেয়া হয়। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ সভাপতি রে¤্রাচাই চৌধুরী এগিয়ে আসেন নিষ্পত্তি করার জন্য। হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল ওহাব খন্দকার, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: বিল্লাল হোসেন ব্যাপারীও সহমর্মিতার হাত বাড়ালেও পরে আর তাদের দেখা পাওয়া যায়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ১১আগষ্ট এরি মধ্যে ঘটে গেল আর একটি ঘটনা।

লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো: সুলতান আহমেদ হামলার শিকার হয় মগাইছড়িতে। তার মানি ব্যাগ নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ছিনিয়ে নেয় দুস্কৃতিকারীরা। তবে এ ঘটনায় ৭জনকে অভিযুক্ত করে থানায় অবশ্য মামলা হয়েছে। জুর্গাছড়ি এবং পরবর্তিতে উপজেলা সদরে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে বিএনপির মধ্যে ভুল বুঝা-বুঝির সৃষ্টি হলেও ছাত্রদলের এক কর্মীকে বহিস্কারের মধ্য দিয়ে তা নিরসন হয় বলে তাদের দাবি। তবে সব ঘটনার দায় ভার নিজ নিজ এলাকার লোকজন নিতে না চাইলেও অনেকের ধারনা সূত্রপাত ঈদের দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই। ঘটনা গুলো সুশীল সমাজ মনে করে রাজনৈতিক বিবেচনায় না নিয়ে স্থানীয় সমস্যা মনে করে তা যে কোন মূল্যে মিটিয়ে ফেলা প্রয়োজন। তা না হলে তুষের আগুন জ্বলে ওঠতে পারে যে কোন মুহুর্তে। অসহায় রোগীদের পাশে কেউ নেই। অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছে না। এলাকার অনেকেরই প্রশ্ন যে ঘটনা নিয়ে এত কিছু তার সমাধান কি হলো?             

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন