নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশীর দেহ নিয়ে গেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী

॥ সন্ধ্যায় বিজিবির টহল দলের উপর দ্বিতীয় দফায় গুলি ॥

SAM_1794

 নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে রামু ৫০ বিজিবির নিয়ন্ত্রণাধীন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৭-৪৮নং পিলারের মধ্যস্থনে প্রধানঝিরি ‘নলা টিলা ঘড়ি’ নামক স্থানে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার পর পরই বিজিপি নিহত যুবকের লাশ মিয়ানমারের কচুবনিয়া ক্যাম্পে নিয়ে গেছে বলে দাবী করেছেন তার পরিবার।

নিহত জয়নাল আবেদীনের বড় ভাই আলী হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, সোমবার ভোরে তার ছোট ভাই মুদি ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন (২০) সহ স্থানীয় নুরুল আমিন ভুট্টু (২৫) ও আমানুল্লাহ (২৩) সীমান্তে গেলে মিয়ানমারের নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় টহলরত বিজিপি তাদের লক্ষ্য করে পর পর ছয় রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এসময় অপর দুই জন দ্রুত পালিয়ে আসলেও জয়নাল আবেদীন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে। সে স্থানীয় মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে। ঘটনার পর পরই বিজিপি টহলদল বাংলাদেশের অভ্যান্তরে প্রায় দুইশত গজ ভিতরে ঢুকে জয়নালের দেহটি নিয়ে যায় বলে নিহত জয়নালের পরিবার দাবী করেছেন।

জানা গেছে, বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর বিকালে আশারতলী বিজিবি ক্যাম্পের একটি টহলদল সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে জয়নালের সন্ধানে খোঁজাখুঁজি করে সন্ধ্যা ৬টায় পূনরায় ক্যাম্পে ফিরে আসে।

এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে মিয়ানমারের ওপারে দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা গেছে বলে জানান স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: হাসান। বিজিপির গুলিতে জয়নাল নিহত হওয়ার কথা তিনিও স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে পালিয়ে আসা আমানুল্লাহ মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, সকালে বসতঘরের দরজা তৈরীর কিছু কাঠের জন্য সীমান্তে গেলে মিয়ানমারের ওপার থেকে বিজিপি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এসময় সে সারির প্রথমে ছিল এবং নুরুল আমিন দ্বিতীয় ও জয়নাল আবেদীন ছিল পেছনে। পরে জয়নালকে মাটি থেকে টেনে মিয়ানমারের ওপারে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সে জানতে পেরেছে বলে জানান।

অপর একটি সুত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্তের ১৫০ গজ ভেতরে ঢুকে লাশটি টেনে নিয়ে তারা মিয়ানমারের ৫০ গজ ভেতরে খোলা জায়গায় ফেলে রেখেছে বিকাল পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের রামু ৫০ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক (সিও) লে.কর্ণেল শফিউল আজম পারভেজ পিএসসি জানান, সীমান্তে তারা এ ধরনের একটি খবর জানতে পারলেও তা নিশ্চিত করা যায়নি। এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ মিয়ানমারের বিজিপির অধিনায়কের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে সীমান্তে হত্যা বা গুলি করার বিষয়টি তারা জানে না বলে দাবী করছেন। বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য বিজিবি টহলদলসহ ঘটনাস্থলে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৮ মে ২০১৪ইং তারিখ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দোছড়ির ৫২নং সীমান্ত পিলার এলাকায় বিজিপির গুলিতে মারা যান ৩১ বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমান। এছাড়াও ২০১৪ সনের জুন মাসে আশারতলী সীমান্তের ৪৬নং পিলার এলাকায় দিলমোহাম্মদ (৩৫), ২০১৩ সনের ২৫ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন (৩৫) বিজিপির গুলিতে মারা যান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন