পানছড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ পোস্টে আতঙ্কের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ সদস্যরা
শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি থানাটি সবচেয়ে দূর্গম এবং প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এই থানাটিতে দীর্ঘ দিন যাবত রয়েছে পরিবহন সমস্যা। তারপরও নিজেদের সেরা টুকু মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে আরো উচ্চ শিখরে নিতে পুলিশ সদস্যরা করে যাচ্ছে শতভাগ চেষ্টা। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় জনগনের অতন্দ্র প্রহরীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই শংকিত।
পানছড়ি থানার আওতায় জনগনের নিরাপত্তায় রয়েছে লক্কর-ঝক্কর তিনটি শিবির পোস্ট। দমদম এক, দমদম দুই ও জিয়ানগর পোস্ট। সরেজমিনে দেখা যায়, পোস্টগুলো কোন রকম দাঁড়িয়ে আছে। হালকা বাতাস বইলেই বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। সেন্ট্রি পোষ্ট, শৌচাগার, পানীয় জলের সংকটের সাথে যুদ্ধ করে মানবেতর দিনযাপন করে জাতীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা।
পোস্টের ঘরগুলোর অবস্থা এতই নাজুক যে তৈরীর পর থেকে মেরামত কাজ যে হয়নি তা দেখা মাত্রই অনুভব হয়। জোড়া তালির খুঁটি, ভাঙ্গা বেড়া, বাঁশের খুঁটি ও চাউনি দিয়ে তৈরী উচু নিচু চৌকি, ভাঙ্গা ও পুরনো ডাসা এবং নড়বড়ে বীমের মাঝে দাঁড়ানো ঘরগুলো যেন পতনের অপেক্ষায় দিন গুণছে। বাংলার দুর-দুরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন মায়ের সন্তানরা জন নিরাপত্তা দিতে এসে এই জীর্ণ শেডে তারা নিজেদের নিরাপত্তাই পাচ্ছে না।
জানা যায়, পার্বত্য শান্তি চুক্তির আগে এসব শিবির পোস্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করত: সেনাবাহিনী। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর থেকে এসব শিবির পোষ্টে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। বিনিময়ে সেনাবাহিনী থেকে তিনটি শিবির পোস্টে প্রতি মাসে পাচ্ছে আট লিটার কেরোসিন ও বছরে এক হাজার টাকা।
পানছড়ি থানার ডিউটিরত অফিসার এসআই হাবিব জানান, তিনটি শিবির পোস্টের দুরবস্থার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু আজো কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি আরো জানান, এলাকাবাসীর সহযোগিতা ও নিজেদের অর্থ দিয়ে মাঝে মধ্যে মেরামত করার ফলে কোন রকমে পোস্টগুলো দাড়িয়ে আছে। তবে শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি জানান।
জিয়া নগর পোস্ট কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা এসআই, এবি আবদুল মান্নান, দমদম এক নং পোষ্টে এসআই, এবি আবদুল মালেক সিকদার ও দমদম ২নং পোষ্টে এসআই, এবি মো: শামসুল আলম এ প্রতিবেদককে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্যও তাদের মানবেতর জীবন যাপনের কাহিনী তুলে ধরেন।
বিশেষ করে ঝুকিপূর্ণ ঘর, ঘুমাবার চৌকিসহ নানাবিধ সমস্যার কথা তারা জানান। অনেকেই জানায়, ঝড়-বৃষ্টি, ঘন-কুয়াশা সব তাদের মাথার উপরেই পড়ে। কারো ঘুম আসেনা। অস্ত্র’র নিরাপত্তা নিয়ে তারা শংঙ্কিত। ভাঙ্গা ঘর কখন যে কি ঘটে যায় সে চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারেনা। পোষ্টে কর্মরতরা নির্ঘুম থেকে থেকে অনেকেই হয়ে পড়ে অসুস্থ।
এলাকাবাসী জানান, ১৯৮০ সালের দিকে এসব শিবির পোস্ট নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর দু’একবার মেরামত হলেও বর্তমানে সবগুলো পোস্টেই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা ঝুঁকির্পর্ণ ভবনে বাস করার কথা স্বীকার করে আরো জানান, শিবির পোস্টগুলোর প্রতি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্তরিক হলেই আধুনিক পোস্ট নির্মাণ সম্ভব। তাহলে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ভয় কাটিয়ে আরো সাহসী হয়ে দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারবেন বলে তারা মনে করছেন।