পেকুয়ার অবহেলিত একটি গ্রাম করিয়ারদিয়া: অরক্ষিত ৫ হাজার মানুষ

এম.জুবাইদ, পেকুয়া:
কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম করিয়ারদিয়া। যেখানে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী কিংবা পরবর্তী সময়ে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। করিয়ারদিয়া পেকুয়া উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় এ এলাকার জনসাধারণ একটি ব্রীজের অভাবে এখনও নৌকার উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন যাপন করছে। বিগত বি এন পি জামায়াত জোট সরকারের সাবেক সফল যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ পেকুয়ার করিয়ার দিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে উজানটিয়া খালের উপর প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রীজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ দলীয় ও দুনীতিবাজ ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানোর ফলে ঐ ব্রীজটি এখনো সাফল্যের মুখ দিখেনি। গত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর  অভিযানের শুরুতে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন আত্মগোপনে চলে যায়। করিয়ারদিয়া এলাকাটি সুদীর্ঘকাল যাবৎ উপজেলা প্রশাসনের উন্নয়নের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। যদিও এ এলাকার লবণ ও চিংড়ি শিল্প বাংলাদেশের অথনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভ’মিকা রেখে আসছে। এ কারণে এই বিচ্ছিন্নদ্বীপ করিয়ারদিয়া উপজেলার স্বর্ণদ্বপী হিসেবে পরিচিত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পেকুয়ার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকা করিয়ারদিয়ায় নেই কোন বিদ্যুৎ বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্যানিটেশন ও উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। ৪ হাজার মানুষের বসতিপূর্ণ এই এলাকায় একটি সরকারী প্রাথমিক থাকলেও নেই কোন সরকারী বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে প্রায় শতাধিক পরিবার জরাজীর্ণ পরিবেশে কোন রকমে জীবন ধারণ করছে। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষেই দিনমজুর শ্রমজীবি।

স্থানীয় এম ইউপি জাফর আলম এই প্রতিবেদক কে জানান দ্বীপ এলাকা করিয়ারদিয়ায় প্রায় ৪ হাজার মানুষের জীবন কাটে সীমাহীন সংকট ও সমস্যায়। করিয়ারদিয়া পেকুয়া উপজেলার শিল্প অঞ্চলখ্যাত, অথচ বৈষম্যের শিকার। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর করিয়ারদিয়ার মানুষ বিভিন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত। অপরদিকে সম্ভাবনাময়ী এলাকা হিসাবে গড়ে উঠার সুযোগ থাকলেও অদৃশ্য কারণে এতদিন পর্যন্ত এ এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন যথেষ্ট হয়নি। এ এলাকায় বরফ কল, লবণমিলসহ ছোট ছোট কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনরা।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা জিয়াবুল হক জিকু আক্ষেপ করে বলেন অপার সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদে বরপুর করিয়ারদিয়া গ্রাম দেশের রফতানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সত্ত্বে ও কর্র্তপক্ষের উদাসীনতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের খামখেয়ালীপনায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হতে বঞ্চিত। ঐ এলাকায় একটি প্রাইমারী ও আরেকটি সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাইমারী স্কুল রয়েছে। কিন্তু দূযোর্গ মোকাবেলায় ২ টি সাইক্লোন শেল্টার পর্যাপ্ত নয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তাই তাদের দীর্ঘদিনের দাবী ঐ এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইক্লোন শেল্টার নিমার্ণের।

বর্তমানে করিয়ারদিয়া এলাকায় অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। গত ৭, ৮ অক্টোবর নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে করিয়ারদিয়া এলাকার চতুপাশেই ১৬ কিলোমিটার বেড়িবাধের মধ্যে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাধই ভেঙ্গে গিয়ে পুরো এলাকা জোয়ার ভাটায় পরিণত হয়েছে। উপকূলের মানুষের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এবারের জলোচ্ছ্বাাসে শুধু করিয়ারদিয়া বিধবস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শতাধিক কাচা বাড়ি ভেসে গেছে প্রায় ১ হাজার একর চিংড়ি ঘের। ২ শ একর আমন ধানের জমি অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে এ এলাকার মানুষ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করে জানান করিয়ারদিয়া জাতীয় অথনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও বরাবরই উন্নয়ন বঞ্চিত রয়ে গেছে এ এলাকাটি। ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়া বাকি ৮ কিলোমিটার ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাধ ও সংস্কার করছে জোড়া তালি দিয়ে যে কোন মুহুর্তে জোয়ারের পানিতে সাগর গর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে বলে জানান এলাকাবাসী।

এই ব্যাপারে উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম শহীদুল ইসলাম চৌধূরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের মধ্যে আমার ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া এলাকাটি সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এ এলাকাটি অউন্নত হয়ে আছে। যেকোন মুহুতে করিয়ারদিয়া পূরো বেড়িবাধটি সাগর গর্ভে বিলিন হতে পারে। সামান্য বৃষ্টি হলে এলাকার মানুষের ঘুম হয় না। এই ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমি বেড়িবাধ ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

এই ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিনিধি কে জানান পূণিমার জোয়ারে কিছু দিন আগেবেড়িবাধটি ভেঙ্গে গিয়ে উপজেলার ২ টি ইউনিয়নে ২৫ গ্রাম প¬াবিত হয়ে জোয়ার ভাটায় পরিণত হয়েছিল। আমি ঐ বেড়িবাধ রক্ষা জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে সেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বেড়িবাধ নিমার্ণ করছি। এমনকি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ও বেড়িবাঁধ নিমার্ণ করছি। বেড়িবাধ ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড কে জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন