পেকুয়ায় লবণের মাঠ তৈরির জেরে হামলা, আহত ৭

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলায় নারী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রসহ গ্রামবাসী অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। আহতদেরকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের জালিয়াখালীর স্কুলঘোনা এলাকায় ফসলী জমিতে শ্রেণি পরিবর্তন করে লবণ মাঠ তৈরী করাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।

এসময় আহত হলেন সদর ইউনিয়নের বকসু চৌকিদারপাড়ার আবু ছৈয়দের পুত্র কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির পেকুয়া সদরের সভাপতি মো. শাহজাহান (৫০), মাহামুদুল করিমের ছেলে বিজিসি ট্রাস্টের এলএলবির ছাত্র মারুফুল করিম (২২), পেকুয়া জিএমসির ৯ম শ্রেণির ছাত্র মুবিন (১৪), বিএমআইর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহবিনুল করিম সারজিম (১৮), জন্নাত আরা বেগম (২৫), তার ১৬ মাস বয়সী শিশুপুত্র নওসাদ, মৃত গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৩৫)।

জানা যায়, পেকুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুম্পা ঘোষ ইউএনও এর নির্দেশে পুলিশ ফোর্স নিয়ে খালে মিষ্টি পানির উৎস থেকে আটকানো একটি বাঁধ অপসারণ করতে দুপুরের দিকে জালিয়াখালীর স্কুলঘোনা এলাকায় পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে উত্তেজিত লোকজন প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হয়। এ জের ধরে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা দুবৃর্ত্তরা দেশীয় তৈরী ধারালো দা, কিরিচ, লাঠিসোটা নিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়।

এদিকে এ ঘটনার জের ধরে সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের ১, ৩ নং ওয়ার্ডের বকসু চৌকিদারপাড়া, জালিয়াখালীর গ্রামবাসীর মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সন্ধ্যার দিকে সৃষ্ট ঘটনার জের ধরে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পেকুয়া থানা পুলিশ দু’দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদর ইউনিয়নের জালিয়াখালী স্কুলঘোনা বিলে সম্প্রতি লবণ মাঠ তৈরী নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তিন ফসলী জমিতে শ্রেণি পরিবর্তন করে একটি চক্র লবণ মাঠ প্রস্তুতি করছিল। স্থানীয়রা এ বিষয়ে ইউএনও পেকুয়াসহ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার দিন দুপুরে পেকুয়ার ইউএনও চাই থোয়াইহলা চৌধুরীর নির্দেশে সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রুম্পা ঘোষ, পেকুয়া থানার পুলিশ, ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ নিয়ে ওই জনস্বার্থ বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। এমনকি জালিয়াখালী পয়েন্টে খাল থেকে একটি বাঁধ অপসারণ করেন। এ জের ধরে জালিয়াখালীর নুরুল ইসলামের পুত্র জিয়াবুলসহ তার অনুগত ৪০-৫০ জনের উত্তেজিত লোকজন এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এ সময় লবণ মাঠের বিপক্ষে অবস্থানকারী জমির মালিক শাহজাহানসহ ৭ জন আহত হয়েছে।

পেকুয়া থানার এএসআই রতন জানান, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা আসার পর শুনেছি হামলা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আজিম জানান, কৃষকদের দাবীর প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড পরিদর্শনে আসেন। এটি নিকৃষ্ট আচরণ। প্রশাসন ও আমাদের সামনে এ ধৃষ্টতা খুবই ন্যাক্কারজনক।

আহত শাহজাহান জানান, আমি কমিউনিটি পুলিশের পেকুয়া সদরের সভাপতি। এ বিলে আমাদের ৭ একর জমি আছে। এ জমিগুলি লবণ মাঠ করার চক্রান্ত করছিল। আমরা প্রতিবাদ করছি। এসিল্যান্ড বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় তারা কিরিচ, লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। প্রশাসনের উপস্থিতিতে এ হামলা করা হয়। আমি একটি বাড়িতে আশ্রয় নিই। তারা গিয়ে সেখানে আক্রমণ করে।

এ বিষয়ে পেকুয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুম্পা ঘোষ তার উপস্থিতিতে হামলার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, মিঠা পানির উৎসে একটি কৃত্রিম বাঁধ তৈরী করে। কৃষকদের বুরো আবাদ ব্যাহত করতে গুটিকয়েক ব্যক্তিরা এ কাজ করে। আমরা বাঁধ অপসারণ করেছি। পরিবেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছিল এ অভিযান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আহত, পেকুয়া, লবণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন