চকরিয়ায় মসজিদ কমিটি ঘোষণা নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদের কমিটি ঘোষণা নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৬ জন মুসল্লি আহত হয়।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চকরিয়া পৌরশহরের সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

এসময় আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মসজিদের সমানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ বাহিনী অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে পৌরশহরে।

মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা জানান, এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদের খতিব হাফেজ বশির আহমদ ওয়াজ শেষ করার পরপরই স্পিকারের বক্তব্য দিতে উঠেন নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদ। ওইসময় তাকে বাধা দেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর। এতে মুসল্লিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নতুন কমিটি মানিনা বলে আলমগীর গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আলমগীর ও সহযোগীকে মসজিদের ভেতরে মারধর করেন। এসময় মুসল্লিরা দিকবেদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.ফখরুল ইসলাম মসজিদে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সকল মুসল্লিকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। পরে আধা ঘণ্টা পর পুনরায় খুতবা ও জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।

মসজিদের হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন, মসজিদ কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম (৫৪), সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর (৪৩), পৌর যুবলীগ সভাপতি হাসান হোছাইন (৩৮), জহিরুল ইসলাম (৩১) ও জয়নাল হাজারী (৩২)।

এসময় চকরিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৮নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিবুল হক সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোছাইন ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদসহ ২৫ সদস্য বৈশিষ্ট্য কমিটি ঘোষণা করেন।

এদিকে জুমার নামাজের পরপরই চিরিঙ্গা সমবায় সমিতির কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদের নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দরা। মসজিদের পবিত্রা ও সুনাম নষ্টকারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবী জানান তারা।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদ বলেন, ১৯৬৫ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা হয়ে আসছিলো। কিন্তু মসজিদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীরের নেতৃত্বে কয়েকজন বখাটে যুবক পরিকল্পিত ভাবে মসজিদের ভেতরে হামলা করেছে। ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রতিষ্ঠার পর কোনোদিন ঘটেনি।

তিনি আরও বলেন, আমি জুমার নামাজের পূর্বে খতিব থেকে অনুমতি নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করি। ওইসময় সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বাধা সৃষ্টি করলে মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে জোর প্রতিবাদ করেছে।

নতুন মসজিদ কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোছাইন বলেন, মসজিদের একটি নির্বাচিত কমিটি থাকার পরও সাবেক সাংসদের ক্ষমতা প্রভাব বিস্তার করে তারা একটি কমিটি দিয়েছিলো। গত ৮ মাস ধরে ওই কমিটির নেতৃত্বে মসজিদের সহায় সম্পদ ও লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করেছে। শুক্রবার ঘোষণা করার চেষ্টা করলে সাবেক সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মুসল্লিদের উপর হামলা করে।

কক্সবাজার সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়ার সার্কেল) রকীব উর রাজা বলেন, চকরিয়া পৌরশহরে মসজিদের ভেতরে মুসল্লিদের মধ্যে মারামারি ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরিবেশ শান্ত করার পর পুনরায় জুমার নামাজ আদায় করা হয়। কেউ অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, মসজিদ হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র স্থান। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা ইবাদত করি। অথচ মসজিদের ভেতরে কমিটি গঠন নিয়ে দুইপক্ষের মারামারি অন্যায় কাজ করেছে। কমিটি গঠন নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে জানাতে পারে। আইন হাতে নেওয়া অপরাধ। উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আহত, কক্সবাজার, সংঘর্ষ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন