পেকুয়া বাজারে আগুন দিয়ে নাশকতার পাঁয়তারা রুখে দিয়েছে জনতা

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া : 

পেকুয়া বাজারে রাতের আধাঁরে দূর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে নাশকতার পায়তারা স্থানীয় জনতা রুখে দেয়ায় বড়ধরণের ক্ষয়ক্ষতি থেকে জনবহুল আলহাজ্ব কবির আহমদ চৌধুরী বাজারটি রক্ষা পেয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যবসায়ীরা বলেন, ২৯ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ব্রাজিল চিলির মধ্যেকার বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা থাকায় অবাধ লোক সমাগমের সুযোগে সংঘবদ্ধ অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা পেকুয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে পাইকারী ও খুচরা গাছ এর দোকান ও গাছ চিরাইয়ের স-মিল সহ আটটি দোকানে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আগুন দ্রুত বাজারের চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বাজারে খেলা দেখতে আসা লোকজন ও আশে পাশের এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ভয়াবহ আগুনের হাত থেকে পেকুয়া বাজারের আভ্যন্তরীন মার্কেট রক্ষা করতে সক্ষম হলেও কপাল পুড়েছে ক্ষুদ্র গাছ ব্যবসাযী সদর ইউনিয়নের শেখের কিল্লা ঘোনার এজহার আহমদের পুত্র আজমগীরের দোকানটি।

আগুনে তার দোকানটির ভিতরে রক্ষিত চিরাই কাঠসহ পুড়ে গেছে লক্ষাধীক টাকার মালামাল। প্রত্যক্ষদর্শী ও অনেক ব্যবসায়ী বলেন, জনবহুল এই বাজারে সুরক্ষিত পাহারাদার থাকার পরও দূর্বৃত্তরা ৮টি দোকানে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে নিরাপদে পেকুয়া-ফাসিঁয়াখালী সংযোগ নদী পার হয়ে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ওপারে চলে যাওয়ায় পুরো উপজেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টির সাথে চাপা ক্ষোভ লক্ষ্য প্রকাশ পাচ্ছে। এদিকে কয়েক হাজার দোকানের প্রায় দোকানে লোক থাকে এছাড়া বিশ্বকাপের চলমান খেলা দেখার জন্যে বাজারের কয়েকটি বড় পর্দা থাকায় বাইর থেকেও লোকজন খেলা দেখতে আসে এর মধ্যে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়ে বারবাকিয়া ফাশিয়াখালীর ওপারে নদী পার হয়ে চলে যাওয়া নিয়ে নাানা কানাঘুষা চলছে।

পেকুয়া থানা পুলিশ দূর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকান পরিদর্শন ও সম্ভাব্য ঘটনার তদন্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। বাজারের ওই এলাকার দায়িত্বরত পাহারাদার হানিফ বলেন, আজমগীরের দোকানে আগুন জলতে দেখে তাড়াতাড়ি চারপার্শ্বের দোকানে খেলা দেখতে থাকা লোকজনকে চিৎকার করে ডেকে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। পরে ওই জায়গায় গিয়ে চারপার্শ্বে টর্চলাইট মেরে দেখি ১২/১৫ জনের একদল দূর্বৃত্ত পেকুয়া-ফাসিঁয়াখালী সংযোগ নদী পার হয়ে ফাসিঁয়াখালীর দিকে চলে যেতে।

স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার পর দোকানের পিছন দিকে গিয়ে দেখি ৮টি দোকানের বেড়া ভেঙ্গে ভিতরে ডুকে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেই তারা। অন্যান্য দোকানের কাঠগুলো ভিজা ছিল বলে দ্রুত আগুনের লেলিহান চারদিকে ছড়িয়ে যেতে পারেনি।

পেকুয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা রয়েছে এমনিতেই আতংক ও ভয়ে। এক শ্রেনীর দূবর্ৃৃত্তরা বাজারের পরিবেশ আবারো অস্থিতিশীল করার জন্যে পরিকল্পিত ভাবে জনবহুল এই বাজারটি ধ্বংস করে রাতের আধাঁরে এই আগুন দিয়েছে। তিনি প্রশাসনের কাছে জোর দাবী করেন, দ্রুত এসব অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করুক তা না হলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলেও শংকা প্রকাশ করেন।

এ নিয়ে এক অনুসন্ধানে জনা গেছে, পেকুয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে রয়েছে কয়েকশ গাছের দোকান। তার মধ্যে পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সদর ইউনিয়নের মাতবর পাড়ার রমিজ আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীরের মালিকনাধীন ১৯টি দোকান রযেছে। এর বেশির ভাগ দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র গাছ ব্যবসায়ীদের। গতকাল দূর্বৃত্তের আগুন দেওয়ার ঘটনাটি তার মালিকনাধীন ৮টি দোকানে। তার মধ্যে আজমগীরকে দেওয়া দোকানটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ও আংশিক পুড়ে গেছে আরো ৭টি দোকান।

এই বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেনীর সুবিধাভোগী মতলববাজ লোক তার জনপ্রিয়তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে আমার মালিকনাধীন ম্যানটেক প্রাপার্টিজ এর নির্মানাধীন মার্কেটে হামলা চালিয়ে পুরো ভবন লন্ডভন্ড করে দেয়। লাখ লাখ টাকা সরকারী রাজস্ব দিয়ে ইজারা নেয়া পেকুয়া বাজারের ইজারা বুঝিয়ে নেওয়ার সময় ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে তারা। প্রতিদিন সাপ্তাহিক সওদার দিনে কোন ধরণের দলীয় কর্মসূচী ছাড়াই বাজারের পরিবেশকে নষ্ট ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে ভীতি ছড়াতে মিছিল মিটিং করে অহেতু উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারী করলে তা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে সবার অগোচরে ফাশিঁয়াখালীর অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা এই মর্মান্তিক নাশকাতামুলক কান্ড ঘটাতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ট তদন্তদাবী করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কঠোর হস্তেক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে বড়ধরণের নাশকতার হাত থেকে রেহ্য়া পাওয়া শত শত ব্যবসায়ী নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেছে বলে ব্যবসায়ী সূত্রে জানাগেছে।

এব্যাপারে পেকুয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, আগুন দেওয়ার ঘটনাটি শুনে আমি সরেজমিন তদন্ত করে এসেছি। তদন্ত এখনো চলছে যদি পরিকল্পিত নাশকতার উদ্দেশ্যে এ আগুন দেয়া হয় তাহলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোরভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন