বান্দরবানে জমে উঠেছে পৌর নির্বাচন: ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

বান্দরবান পৌরসভা নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার:

বান্দরবানে আসন্ন ২টি পৌর নির্বাচন জমে উঠেছে। বান্দরবান সদর ও লামা পৌর সভায় মেয়র পদে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জাতীয় পার্টি (জেপি)সহ চারটি দলের প্রার্থীরা অংশ নিয়েছে। দু-পৌরসভায় মেয়র পদে ৬ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৭৭জন প্রার্থীসহ মোট ৮৩জন প্রার্থী অংশ নিয়েছে।

বান্দরবান সদর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত ইসলাম বেবী (নৌকা), বিএনপির জাবেদ রেজা (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মিজানুর রহমান বিল্পব (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ৮ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর ২৭জনসহ সর্বমোট মোট ৩৫জন প্রার্থী অংশ নিয়ে। পৌরসভায় পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৫শত সাত এবং নারী ভোটার ১১হাজার একশত চল্লিশসহ মোট ২৬ হাজার ৬মত ৪৭ ভোটার রয়েছে।

লামা পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আমির হোসেন (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের জহিরুল ইসলাম (নৌকা) ও জাতীয় পার্টি (জেপি) মো. ফরিদ উদ্দিন (সাইকেল) প্রতীকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ১৩ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর ২৯ জনসহ মোট ৪২জন প্রার্থী অংশ নিয়েছে। এ পৌর এলাকায় ১১ হাজার ৪৪৯ জন ভোটার ভোটার রয়েছে।

অন্যদিকে মেয়র পদে দু-পৌরসভায় কোন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিস্কার করলেও এক্ষেত্রে বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

বান্দরবান সদর পৌরসভায় ত্রিমুখী লড়াই হবার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী বেবী ইসলাম। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারী ও সাবেক পৌর কমিশনার ছিলেন। এলাকায় সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার সর্বজন স্বীকৃত রয়েছে।

অবশ্য আওযামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের মধ্য প্রকাশ্য কোন বিরোধ দেখা না দিলেও ভেতরে ভেতরে অনেক নেতা জাতীয় পার্টি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ২০১৩ সালে বহিষ্কৃত জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৭ বছরের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা এবং ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বহিষ্কৃত জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৪ বছরের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমানসহ বহিষ্কৃতরা জোট বাঁধছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাদের অনুসারীরা জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রাথী মিজানুর রহমান বিল্পবের পক্ষে ভিতরে ভিতরে কাজ করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

তবে এসব বিষয়ে দু-নেতা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছেন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের প্রতীক নৌকা।

এদিকে বিএপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজা প্রচারনার পাশাপাশি ঘর গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঘরের শত্রু বিভীষণ কথাটি মাথায় রেখে দলীয় কোন্দল এবং নেতাকর্মীদের মান-অভিমান ভাঙ্গাতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলের পক্ষে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন।

অপরদিকে বিএনপির কোন্দল মেটাতে গত ১১ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহাবুবুর রহমান শামিমের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মিলিয়ে দিতে জেলা বিএনপির সভাপতি সাচিং প্রু জেরী’সহ বিএনপি’সহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জরুরী সভা করেন।

সভায় বিএনপির সিনিয়ার নেতাসহ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ জাবেদ রেজা উপস্থিত ছিলেন। পরে সাচিং প্রু জেরী সাংবাদিকদের বলেন বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে মিলন হয়েছে। ঐদিন বিকালে শহরের বালাঘাটায় নির্বাচনী অফিস উদ্বোধনের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় মাঠে নামেন সাচিং প্রু। এরপর থেকে জেরী ও তার অনুসারীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ না করার অভিযোগ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা এমনও বলতে শোনা গেছে কেন্দ্র জাবেদকে মনোনয়ন দিয়েছে তাই কেন্দ্রের দায়ীত্ব তাকে জিতিয়ে আনা।

পৌর এলাকায় বিএনপির ভোট ব্যাংক বলে পরিচিত থাকলেও কোন্দলের কারণে মেয়র পদটি হাত ছাড়া হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

দুই দলের বিদ্রোহের সুযোগে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান বিল্পব। তার বড় পরিচয় তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এছাড়া তিনি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত আইন বিষয়ক সম্পাদক। বান্দরবানে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কর্মকান্ড না থাকলেও মিজানুর রহমানের ব্যক্তি ইমেজ ভোটারদের আকর্ষণ করবে বলে জানিয়েছেন ভোটাররা ।

অন্যদিকে লামা পৌরসভায় তিন প্রার্থী হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্য। ঐ এলাকায় দলীয় কোন কোন্দল না থাকায় ভোটাররা নিজ দলের প্রার্থীদের ভোট দেবে বলে জানিয়েছেন। তবে ভোটের আগে দলের কারিশমার উপর নির্ভর করছে কোন দল জিতিয়ে আসবে। এ পৌর সভায় ১১ হাজার ৪৪৯ জন ভোটার ভোটার রয়েছে।

এদিকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন, দোয়া চাইছেন, খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। প্রচন্ড শীতে সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রাথীদের প্রচার প্রচারণা। তবে এ খোঁজ-খবর কেবল ভোটের একমাসই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে দাবি ভোটারদের।

অন্যদিকে সংরক্ষিত ও পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তারাও ভোটারদের উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন।

চায়ের টেবিল, খেলার মাঠে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসতবাড়ীতে থেকে শুরু করে সব জায়গায় চলছে নির্বাচনী হাওয়ায়। সকাল থেকে প্রার্থীরা দল বেধে বাড়ী বাড়ী ও রাস্তায় রাস্তায় ভোটারদের হাতে পায়ে ধরে ভোট ভিক্ষা করছে। রিক্সা বা গাড়ীতে মাইক বেঁধে প্রার্থীদের নানা ধরনের গুনগান গেয়ে প্রচারণা করতে দেখা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন