বান্দরবান এলজিইডি’র দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে টেন্ডার অনিয়মের অভিযোগ

fec-image

অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার:

বান্দরবানে সিএইচটিআরডিপি প্রকল্পের প্রায় ৪০ কোটি টাকার সড়ক’সহ উন্নয়ন কাজের টেন্ডারে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) দায়িত্বরত স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী (টেন্ডার কমিটির সভাপতি) এনএস জিল্লুর রহমান এবং সহকারী প্রকৌশলী (টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব) দিবাকর রায় দুজনে ১২টি উন্নয়ন কাজের বিপরীতে প্রত্যেক ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রতিটি কাজের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও সিএইচটিআরডিপি প্রকল্পের পরিচালক সুশংকর আচার্য এবং জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরীফ হোসেন দুজনের নামেও অতিরিক্ত আরো দুই লক্ষ গ্রহণের অভিযোগ করেছে সুবিধাভোগী ঠিকাদাররা।

স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঠিকাদাররা জানায়, সিএইচটিআরডিপি প্রকল্পের অর্থায়নে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত সড়ক’সহ প্রায় ৪০ কোটি টাকার ১২টি উন্নয়ন কাজের টেন্ডার আহবান করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। লাভজনক উন্নয়ন কাজগুলোর প্রতিটি টেন্ডারের বিপরীতে একাধিক টেন্ডার ফরম (সিডিউল) ড্রপিং হওয়ার কথা থাকলেও এ টেন্ডারের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। প্রতিটি উন্নয়ন কাজের বিপরীতে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী তিনটি করে ফরম ড্রপিং দেখাতে হয় বলে নিয়ম রক্ষায় কাজ বন্টন করে দেয়া ঠিকাদারদের দিয়ে ৩/৪ টি করে ফরম ড্রপিং করানো হয়েছে। প্রতিটি কাজে ঠিকাদার ভেদে ৮ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত লেসে ফরম ড্রপিং করা হয়েছে। অনেকে তার চেয়েও বেশি লেস দিয়েছেন। কাজ বন্টন করে দেয়া ঠিকাদারদের অধিকাংশেরই কাগজপত্র ঠিক নেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় সব ধরণের যোগ্যতা এবং কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও অনেক ঠিকাদারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফাইল থেকে সরিয়ে ফেলে কাগজপত্রের অসংগতি দেখিয়ে ড্রপিং করা ফরম বাতিল করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় ঠিকাদারদের।

মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের চাহিদামত উন্নয়ন কাজগুলো ভাগ ভাটোয়ারা করে দিয়েছেন টেন্ডার কমিটির দায়িত্বরত দুই প্রকৌশলী বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান এবং সহকারী প্রকৌশলী দিবাকর রায় দাবী অভিযোগকারী ঠিকাদারদের। অতিরিক্ত লেস দিয়ে নেয়া উন্নয়ন কাজগুলোর গুণগতমান ঠিক থাকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।

স্থানীয় ঠিকাদার হ্লামংপ্রু, ইউটিমং অভিযোগ করে বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার পরও কাগজপত্রের ত্রুটি দেখিয়ে আমার ড্রপিং করা টেন্ডার ফরম বাতিল করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান এবং সহকারী প্রকৌশলী দিবাকর রায় দু‘জন মিলে অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে নয়-ছয় করে পছন্দের ঠিকাদারদের মধ্যে কাজগুলো বন্টন করে দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন সুবিধাভোগী ঠিকাদার অভিযোগ করেন, সিএইচটিআরডিপি প্রকল্পের ১২টি উন্নয়ন কাজের বিপরীতে প্রতিটি কাজের জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অভিযুক্ত দুই প্রকৌশলী। এ টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গেও তাদের দু‘জনের বাকবিদণ্ডা এবং বিরোধ চলছে। ঘুষের টাকায় মদ জুয়াসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে মেতে থাকেন তারা। এদের চাহিদামত ঘুষের টাকা দিয়ে নয়-ছয় করে উন্নয়ন কাজ যেভাবে ভাগিয়ে নেয়া যায়, তেমনি ভাবে টেন্ডারে পাওয়া অন্যের কাজও বাতিল করানো সম্ভব। ওদের সঙ্গে সর্ম্পক রাখলে স্থানীয় সরকার বিভাগে সবি জায়েস করানো যায়। অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরাও তাদের দু‘জনের আচরণে সন্তোষ্ট নয়।

তবে অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের (টেন্ডার কমিটির সভাপতি) সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী এনএস জিল্লুর রহমান বলেন, কোনো কোনো উন্নয়ন কাজের বিপরীতে মাত্র তিনটি করে ফরম জমা পড়েছে কথাটি সত্য। তবে শুধুমাত্র একজন ঠিকাদারও যদি ফরম জমা দেয়, তাকেও দরদাতা হিসেবে কাজটি দেয়ার বৈধতা রয়েছে। টেন্ডার কমিটির সভাপতি আমি হলেও মূলত সবকিছু দেখে প্রকৌশলী দিবাকর।

তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, কিছু ঠিকাদার আছে, যারা সুবিধা নিতে না পেরে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টা পাল্টা অভিযোগ করেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে তার কোনো ধরণের বিরোধ নেই বলে দাবী করেন।

অপরদিকে সহকারী প্রকৌশলী দিবাকর রায় বলেন, ভুল ত্রুটি মাঝে মধ্যে হতে পারে। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগটি সত্য নয়। ই-টেন্ডারে নয়-ছয় করার সুযোগ তেমন একটা থাকেনা। ঠিকাদারররা অনেক সময় অন্ধকারে অভিযোগের ডিল ছুড়ে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন