বিদ্যালয় নির্মান কাজ হয়নি পাঁচ বছরেও, চূড়ান্ত বিল উত্তোলিত তিন বছর আগে

seprue-school-copy

রুমা প্রতিনিধি:

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। তবে কাজ শেষ না হলেও ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর মধ্যে যোগসাজশে কাজটি সমাপ্ত দেখিয়ে চুড়ান্ত বিল উত্তোলণ করা হয়ে গেছে আরও প্রায় তিন বছর  আগে। অথচ বিদ্যালয়টির কাজ শেষ হয়নি এখনো। অনিয়মিত হলেও নানা সমস্যায় পাঠদান কার্যক্রম কিন্তু চলছেই। এটি বান্দরবানের রুমা উপজেলার গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের ‘সেপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। অসমাপ্ত বিদ্যালয়টি ছাদ থেকে পানি চুষে পড়ে পাঠদান কার্যক্রম প্রায় সময় বন্ধ রাখা হয়। কবে নাগাদ শেষ হবে বা আদৌ করা হবে কিনা, তা কেউ স্পষ্ট বলতে পারছিলা না। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাঠ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও  অভিভাবকেরা ।

সোমবার দুপুরে রুমা বাজারে একটি চা দোকানে খোলামেলা আলাপচারিতায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেপ্রু পাড়ার লোকজন এসব কথা এ প্রতিবেদেকে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ সালে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি) বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিডিপি-৩)‘র আওতায় ৫৬লক্ষ টাকার ব্যয়ে ‘সেপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজ  সমাপ্ত না করে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করে ঠিকাদার তিন কিস্তিতে চূড়ান্ত বিল উত্তোলণ করেন। নির্মাণ কাজ শতভাগ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হয়েছে, এ প্রতিবেদক সহকারে বিল প্রস্তুত করেন অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী। এতে বিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান অনুমোদিত স্বাক্ষরের পর ঠিকাদার টাকা উত্তোলণ করে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার পর চূড়ান্ত বিল দেয়ার নিয়ম-নীতি থাকা সত্ত্বেও এখানে তা মানা হয়নি।

গালেঙ্গ্যা ইউপি‘র চেয়ারম্যান শৈউসাই মারমা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বিদ্যালয়টি যে কেউ দেখলে নতুন বলে মনে হবেনা। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ থেকে পানি চুষে পড়ছে। বিদ্যালয়টি নির্মাণের অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি বিদায়ী ইউএনও‘কে বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলাম। তখন ইউএনও সাহেব এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলীকে ডেকে পাঠান এবং বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে চুড়ান্ত বিল প্রদানে স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্ত পরে জানা গেল, চুড়ান্ত বিল হয়ে গেছে। বিষয়টি নবাগত ইউএনও‘কে আবারও লিখিত জানাবেন বলে জালালেন ইউপি চেয়ারম্যান শৈউসাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চূড়ান্ত বিল নেয়ার পর একদিকে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ অসমাপ্ত বিদ্যালয় নির্মাণ কাজটি ফেলে রেখে দেয়, অন্যদিকে এলজিইডি‘র উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ-প্রকৌশলীদ্বয় গড়িমসি করে নির্মাণ কাজ সম্পাদনের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে সরকারের ৫৬লক্ষ টাকার ব্যয়ে নির্মানাধীন বিদ্যালয়টি অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী মন মোহন দাশ অন্যত্র বদলী হয়ে ইতোমধ্যে চাকরির অবসরে গেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থেকে দায় এড়ানো তাদের আলাদা-আলাদা বক্তব্য পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (৮নভেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোন মহন দাশ বলেন নির্মাণ কাজটি কোন  বিদ্যালয় ও কোথায় ছিল, তা মনে রাখতে পারছিনা। ওই সময়ে দায়িত্ব থাকা উপসহকারি প্রকৌশলীর কাছে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমা বলেন, ঠিকাদারের এক লক্ষ টাকার মতো জামানত জমা আছে। সেই টাকা দিয়ে বাকী কাজগুলো করিয়ে নিতে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভার মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ শেষ হবে তিনি জানাতে পারেননি।

এলজিইডি উপসহকারি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রবিউল হোসেন বলেন, সেপ্রু পাড়া সরকারি বিদ্যালয়টি নির্মাণ করেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মার্মা এন্টারপ্রাইজ। বর্তমানে ওই লাইসেন্স দিয়ে গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নে আরেকটি নতুন বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ চলছে। এ ঠিকাদারের মাধ্যমে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে এর মালামাল নিয়ে গেছে জানান তিনি।

তবে গালেঙ্গ্যা ইউপি চেয়ারম্যান শৈউসাই বলেন, সেপ্রু পাড়ায় কোনো নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যায়নি এখনো। রবিউল সাহেবের এ বক্তব্য মিথ্যা ও মনগড়া বলে দাবি করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন