মহালছড়ির ১৩০ জেলে পরিবার পবিত্র ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে
মহালছড়ি প্রতিনিধি:
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশী। পবিত্র মাহে রমজানের শেষে পবিত্র ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করতে রঙ বেরঙের নতুন নতুন জামা কাপড় পড়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা দল বেঁধে একে অন্যের বাড়িতে যাবে। কিন্তু মহালছড়ি’র সিলেটি পাড়া ও নতুন পাড়ার ১৩০টি জেলে পরিবারের ক্ষেত্রে এবারের ঈদে হতে যাচ্ছে এর ব্যতিক্রম।
খাগড়াছড়ি’র মহালছড়ির সিলেটি পাড়া ও নতুন পাড়া নামক গ্রামের ১৩০ পরিবার জেলে কাপ্তাই হৃদ থেকে মাছ ধরা তাদের পেশা। এদের মাছ ধরা ও মাছ বিক্রি ছাড়া তারা অন্য কোন উপার্জন নেই।
এবারের ঈদে মহালছড়ির সিলেটি পাড়া ও নতুন পাড়া নামক দু’টি গ্রামে ১৩০ পরিবারে এবারের ঈদের আমেজে ভাটা পরবে, লাগবে না কোন উৎসবের আমেজ এবং গায়ে উঠবে না কোন নতুন জামা কাপড়। সিলেটি পাড়ার বেশির ভাগ মানুষ মাছ ধরা ও মাছ বিক্রির পেশায় জড়িত কিন্তু এখন এই কর্মব্যস্ত মানুষগুলো হরহামেশায় বেকার জীবন যাপন করছেন প্রায় তিন মাস যাবৎ। কথাগুলো মহালছড়ি উপজেলা সদরের সিলেটি পাড়ার জেলে পরিবার প্রধানদের। কাপ্তাই হ্রদের মাছ বিক্রির উপার্জনের টাকা দিয়ে চলতো ১৩০টি পরিবারের সংসার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৮ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাপ্তাই হৃদ হতে মাছের সুষ্ঠু ও প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি, মজুদ এবং ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাতের উপর বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ই মে থেকে বেকার জীবন যাপন করছেন উক্ত সিলেটি পাড়া ও নতুন পাড়া দু’টি গ্রামের ১৩০ পরিবারের হাজার খানেক লোক।
আরো জানা যায়, প্রতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকার কাপ্তাই হৃদ হতে টানা ৩ -৪ মাস মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। এই বছরও ৮ই মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাপ্তায় হৃদ থেকে মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। প্রতি বছর মাছ ধরা বন্ধের সময় রাঙ্গামাটি জেলার সকল কাপ্তাই হৃদ থেকে মাছ ধরে জীবন যাপন করে এমন জেলেদের সরকার কর্তৃক রেশন দেওয়া হয়। শুধু মাত্র দেওয়া হয় না খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার জেলেদের। রেশন পাওয়ার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহলে বেশ কয়েকবার ধর্ণা দিয়েও কাজ হয়নি বলে জানান সিলেটি পাড়া বাসিন্দা মোঃ রোকন মিয়া।
এই ব্যাপারে সিলেটি পাড়ার মোঃ একেন উল্যাহ (৬৫) জানান, তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সাত সদস্যর সংসার। কাপ্তাই হ্রদ হতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ ধরা বন্ধ হওয়ার পর থেকে তিনি বেকার জীবন যাপন করে বাসায় বসে আছেন। বয়সের ভারে অন্য কোন কাজও করতে পারেন না তিনি। তাই কোন রকম কষ্ট করে চলছে তার সংসার। এবারের ঈদে ছেলে মেয়েদের নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়ার সামর্থ না থাকায় ঈদ করবে না বলে জানান তিনি।
একেন উল্যাহ এর মতো আরেক জেলে মোঃ চুন্নু মিয়ার (৪৫) সাথে কথা বলে জানা যায়, তার তিন ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে স্ত্রীসহ নয় জনের সংসার। তিনি এবারের ঈদে পরিবারের কারোর জন্য এখনো পর্যন্ত নতুন জামা কাপড় কিনেন নাই এবং কিনবেনও না। শুধু চেষ্টা করছেন অন্তত যেন ঈদের দিন ছেলে মেয়েদের মূখে সেমাই চিনি মুখে তুলে দিতে পারেন। তিনি আরো বলেন, তার মত সিলেটি পাড়া ও নতুন পাড়ায় মোট ১৩০ পরিবারের হাজার খানেক মানুষ ঈদের আমেজ থেকে বঞ্চিত হবেন এবার। এছাড়াও সুজিলা বেগম (৩০) নামে সিলেটি পাড়ার এক মহিলা জানান, ছেলে মেয়ে কান্না করছে জামা কাপড় কিনে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই বছর কিনে দেওয়ার সামর্থ তার নেই। তাই কিনে দেওয়া হবে না। কারণ আমার স্বামী মাছ ধরা ছাড়া আর কোন কাজ পারে না। তাই আমাদের উপার্জনও নেই।
এই ব্যাপারে মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ক্যাচিং মিং চৌধুরী’র নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘১৩০ পরিবারের হাজার খানেক লোক ঈদ করতে পারবে না শুনে খারাপ লাগছে। আর এটা একটা মহালছড়ির জন্য বেদনাদায়ক ঘটনা।’ সরকার ব্যবস্থা না নিলে তাদের করনীয় কিছুই নেই বলে জানান তিনি।