মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসে বদলে গেছে রেকর্ডরুমের নথি ব্যবস্থাপনা: নিশ্চিত হবে ভূমি সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা :

১০ ফুট বাই ৮ ফুট স্যাতস্যাতে ছোট্ট একটি কক্ষ। সেখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতো গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। আবার মেঝেতে পড়ে থাকা নথিপত্রের উপর ছাদ থেকে খসে খসে পড়ত প্লাস্টার। তেলাপোকা ছুটোছুটি করছে কক্ষটি জুড়ে। নথি পাওয়া বা একটি রেকর্ড সংশোধনের জন্য সেবাগ্রহীতাদের ঘুরতে হতো দিনের পর দিন। কদিন আগেও রেকর্ডরুম মানেই স্যাতস্যাতে ছোট্ট একটি কক্ষ। নথি পাওয়া নিয়ে ছিল দীর্ঘসূত্রিতা। একটি নথি পেতে দিনের পর দিন লেগে যেতো। দুই মাস আগেও মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসের চিত্র ছিল এমনই। মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসকে বলা হতো ‘অব্যাবস্থাপনার তীর্থভূমি’।

মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসের স্যাতস্যাতে মেঝে থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উঠেছে আলমিরা বা তাকে। মাটিরাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ আলীর উদ্যোগে একটি উদ্যোগেই বদলে গেছে পুরনো দৃশ্যপট। হাত বাড়ালেই মিলছে রেকর্ড সংশোধন বহি থেকে শুরু করে নামজারি মামলার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। যা ক‘দিন আগেও ছিল শুধুই কল্পনা।

৩৩ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের মেধাবী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদানের কয়েকদিনের মধ্যেই বদলে গেছে মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসের রেকর্ডরুমের চিরাচরিত দৃশ্যপট।

আলাপকালে মাটিরাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ আলী জানান, এখানে যোগদানের পরপরই রেকর্ডরুমে নথির হাল দেখে হতাশ হয়ে পড়েন। তখনই নথি ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তনের চিন্তা করেন। যেমন চিন্তা তেমনই কাজ। তার উদ্যোগে মাত্র কয়েকদিনে বদলে গেছে মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসের নথি ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সার্বিক চিত্র।

এখন গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো বছর ও কেস নম্বর অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। এখন আবেদন করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পাওয়া যাবে গুরুত্বপুর্ণ নথি এমনটাই জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ আলী। ভবিষ্যতে মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসে রেকর্ডরুম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালু করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। জনগণের সেবা প্রাপ্তি সমৃদ্ধ করতে নথি ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, রেকর্ড সংরক্ষন ভূমি অফিসের অন্যতম কাজ। তবে জনবান্ধব ভূমি অফিস প্রতিষ্ঠায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী মোহাম্মদ ইউনুছ আলী মোল্লা বলেন, সিস্টেমলসের কারনেই এরকমটা হয়েছে। হাজার হাজার নথি ছোট একটি রুমে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে। একটি নথি খুঁজে পেতে দিনের পর দিন লেগে যেতো। ফলে যথা সময়ে সেবা প্রাপ্তি ব্যাহত হতো। এসি ল্যান্ড যোগদানের পরপরই স্যারের উদ্যোগের ফলে নথি ব্যস্থাপনায় গতি ফিরেছে। এখন আর জনভোগান্তি থাকবে না।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ আলী মাটিরাঙ্গায় যোগদানের দুই মাসের মাথায় স্যাতস্যাতে মেঝেতে ধুলো ময়লায় ঢেকে থাকা ফাইলগুলোতে পরিচ্ছনতার ছাপ লেগেছে। ভবিষ্যতে ভূমি অফিসের সকল কর্মকাণ্ডে গতি ফিরবে বলেও মনে করেন তিনি।

বিষয়টি জানাজানি হলে বছরের পর বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো স্যাতস্যাতে মেঝেতে পড়ে থাকার পর দীর্ঘ দিনের জনভোগান্তির লাঘব হবে বলেই মনে করছে মাটিরাঙ্গার সচেতন মহল। তবে শুধুমাত্র নথি ব্যবস্থাপনাই নয় ভূমি অফিসকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার দাবি উঠেছে সচেতন মহল থেকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন