সংবাদ সম্মেলন

মিথ্যাচার ও উস্কানিমূলক বক্তব্যে ভোটারের আস্থা হারাচ্ছেন মিজান সাঈদ: এমপি কমল

fec-image

কক্সবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন- “মামলাবাজ রাজনীতির মানুষের কাছে কক্সবাজারবাসী জিম্মি হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে নতুন প্রার্থী হয়ে মিজান সাঈদ একটার পর একটা মামলা করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করেছেন। তিনি নিশ্চিত পরাজিত হবেন। তবে কমপক্ষে ১০০টি মামলা রেখে যাবেন।”

কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজান সাঈদের ধারাবাহিক অপপ্রচার ও উস্কানিমূলক বক্তব্যে প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এ অভিযোগ করেছেন।

বৃহষ্পতিবার, ৪ জানুয়ারি দুপুরে রামুর ওসমান ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমপি কমল বলেন- আর মাত্র দুদিন পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মিজান সাঈদ ও তার সাথে থাকা লোকজন হঠাৎ করে মিথ্যাচারে নেমেছে।

তিনি বলেন, “গত বুধবার বিকাল ৪ টায় আমি গাড়িযোগে ঈদগাওয়ে পথসভা করার জন্য রওনা দিই। জোয়ারিয়ানালা বাজার অতিক্রম করার সময় সেখানকার চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জনের একটি দল হঠাৎ করে আমার গাড়ির বহরের পেছনে থাকা একটি গাড়িতে আক্রমন করে। আওয়াজ শুনে আমি মাদ্রাসা গেইটে দাঁড়লে ঈদগড় সড়কে অপহরণ-ডাকাতিতে জড়িত ৪/৫ জন ডাকাত আমার গাড়ির দিকে আসতে থাকে। তখন আমাকে বাঁচাতে আশপাশের শত শত মানুষ ছুটে আসে। হঠাৎ করে তারা দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে এবং লাটি সোটা নিয়ে ইটপাটকেল নিতে শুরু করে। পরে জনতার বাধার মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিব কোট গায়ে দিয়ে ঈগল প্রতীকের জন্য প্রচারনা চালাচ্ছিলেন। নৌকার বিরোধিতা করায় স্থানীয়রা তখন চেয়ারম্যানকে মুজিব কোট খুলে ফেলতে বলেন। চেয়ারম্যান নিজেই মুজিব কোট ছিঁড়ে, উল্টো অভিযোগ করছেন আমার লোকজন নাকি তার মুজিব কোট ছিঁড়েছে।”

এমপি কমল বলেন- মিজান সাঈদ দাবি করেছেন, আমি নাকি নিজের হাতে গুলি করেছি। অথচ চেয়ারম্যান প্রিন্স বলেছেন তিনি এটা কেবল শুনেছেন। ওইস্থানে থাকা হাজারো মানুষে এটা চোখে দেখেনি। যা মিজান সাঈদ দাবি করেছেন। এভাবে তিনি বার বার মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।

এমপি কমল সাংবাদিকদের আরও জানান- “গত ৩০ নভেম্বর সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার সময় ছিলো। সবাই ওই সময়ে মনোনয়ন জমা দেন। মিজান সাঈদ আসেন ৪ টা ৪০ মিনিটে। জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক তাকে জানালেন, ৪ টায় সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন আর জমা নেয়া যাবে না। মিজান সাঈদ সেদিন সংবাদ সম্মেলন করেন এবং হাই কোর্টে যান। হাই কোর্টে অভিযোগ করলেন, আমি নাকি আমার লোকজন দিয়ে তাকে অপহরণ করেছি। নির্বাচন অফিসের সামনে হাজার হাজার মানুষে ছিলো, শত শত সাংবাদিক ছিলো। এমন দৃশ্য কেউ দেখেনি। তিনি স্বজ্জন ব্যক্তি হলে এমন মিথ্যাচারের আশ্রয় নিতেন না। মিথ্যাচারের মাধ্যমে আইনের ফাঁকে তিনি বৈধতা নিয়ে আসলেন। এসে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন জমা দিলেন। জমা দেয়ার ২দিন পর শুনানী ছিলো। শুনানীতে ৪ লাখ ৪ হাজার ৭০০ জনের দস্তখত তিনি জাল করেন। স্বাক্ষর করেনি এমন শত শত মানুষ ওই সময় মানববন্ধন করে। তারপরও রিটার্নিং অফিসার ৩ জনের স্বাক্ষর জালিয়াতি দেখে তার মনোনয়ন বাতিল করেন। এরপর তিনি আবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগ করলেন, আমি নাকি ওই ৩জনকে অপহরণ করেছি। এ কারণে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের নাকি খোঁজে পায়নি। প্রথম বলেছিলেন তাকে অপহরণ করেছি, পরে অভিযোগ করলেন তার লোকজনকে অপহরণ করেছি। অথচ এ ধরনের কোন ঘটনা কক্সবাজারে ঘটেনি। এমনকি তাদের অপহরণের বিষয়ে তাদের আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়া প্রতিবেশী থানায় কোন অভিযোগ করেনি। অথচ এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি আবারো মনোনয়ন বৈধ করেন।”

এমপি কমল অভিযোগ করে বলেন, “ মিজান সাঈদ প্রার্থী হওয়ার পরই উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তিনি বললেন, জুলুমবাজ, অত্যাচারি, ভূমিদস্যুর হাত থেকে কক্সবাজারবাসীকে তিনি মুক্ত করতে চান। আমি কখনো কাউকে জুলুম করেছি? আমি কারো জমি দখল করেছি? অথবা অন্য কাউকে দিয়ে জমি দখলে সহায়তা করেছি?। আমি কাউকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছি? মিজান সাঈদ ৩০ বছর পর কক্সবাজার এসে এমন মিথ্যাচার করলেন। অথচ আমার জনগণতো দূরের কথা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামাতের কোন নেতাকর্মীও আমার বিরুদ্ধে কখনো এ ধরনের বক্তব্য রাখেনি। মিজান সাঈদ এ ধরনের ধারাবাহিক উস্কানিমূলক ও মিথ্যাচার চালিয়ে মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার চেয়ে মানুষের কাছে আস্থা হারাচ্ছেন। তিনি প্রতিদিন ফেসবুকে এবং সাংবাদিক সম্মেলন করে মিথ্যাচার করেন। আমি তার লোকজনকে মেরেছি, পিটিয়েছি, হুমকী দিচ্ছি, এ ধরনের মনগড়া অভিযোগ আনতে লাগলেন। তার কাজই হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া। মূলত তিনি নির্বাচন করতে চান না। এ নির্বাচনে তার ভরাডুবি শতভাগ নিশ্চিত। লজ্জাজনকভাবে তিনি পরাজিত হবেন।”

কমল বলেন, “এ আসনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তিনি ইসরাইলের মোসাদ থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন। বিএনপি এবং জামাত নির্বাচন না করলেও এবার নির্বাচনে তাদের অনেকে কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন। তাদের সকলের দাবি, এ আসনে সবার জন্য নিরাপদ এমপি হচ্ছেন কমল। কারণ আমি কখনো কারো বিরুদ্ধে মামলা করিনি। এমনকি ১৫ বছরের প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজলের বিরুদ্ধেও কোন মামলা করেননি। কাজল সাহেবও আমার বিরুদ্ধে কোন মামলা করেননি। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও আমি মামলা করিনি। এ কারণে বিএনপি-জামাত সমর্থিতরা মনে করছেন আমি তাদের জন্য নিরাপদ। তাদের অনেকে এখন প্রকাশ্যে আমার জন্য ভোট চাচ্ছে। মিজান সাঈদের সাথে যারা নির্বাচনে কাজ করছেন, তাদের কোন ভোট নেই। নেই জনসমর্থন। মিজান সাঈদ শিক্ষিত নামের কলঙ্ক। তিনি ৭ কানি জমি কিনেছেন রশিদনগরের ধলিরছড়া লম্বাঘোনা এলাকায়। অথচ মসজিদের ভিতরে থাকা ২ কড়া জমি উদ্ধার করার জন্য তিনি মসজিদও ভেঙ্গেছেন। তিনি কক্সবাজারের খাস জমির লোভও সামলাতে পারবেনা। এ ধরনের মানুষের কাছে কক্সবাজারবাসী কখনো নিরাপদ হবে না। মিজান সাঈদ ছাত্রজীবনে শিবির করেছেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি করেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গেছেন। একটি দল বদল করে অন্য দলে যায়, এমন অনেক মানুষ আছে। কিন্তু তিনটি দলের সাথে তিনি বেঈমানি করেছেন। এ ধরনের ঘটনা দেশে আর নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে এমপি কমল আরও অভিযোগ করেন, “মিজান সাঈদের গাড়ি দেখা যায়, ঈদগড়ের অপহরণ ও ডাকাতিতে জড়িতরা। তার গাড়ি বহরে থাকে ফাসিয়াখালীর রাজ্জাক মেম্বার। যিনি ক্রসফায়ারের আসামী। তার ছোট ভাই অপহরণ ও গরু চুরির ঘটনায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলো। মিজান সাঈদ এবং তার সাথে থাকা ৩টি পিকআপে তল্লাশী চালালে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হবে। এজন্য তিনি নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।”

এমপি কমল বলেন “বন্যাসহ যে কোন দূর্যোগে দূর্গত মানুষের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ত্রান বিতরণ করি। সরকারি যা বরাদ্ধ পাই, তা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে বিতরণ করি। আমরা ১৫ আগস্টে দেশের সবচেয়ে বড় মেজবান করে মানুষকে খাওয়াই। আমরা বিশ^ ইজতেমায় থাকি। প্রতিটি মাহফিল, বিয়ে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াসহ যে কোন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আমি থাকি। বাংলাদেশে সবচেয়ে সেবক এমপি হিসেবে বেঁচে নিয়ে হলে কয়েকজনের মধ্যে আমাকে রাখতে হবে। বাংলাদেশে যদি দূর্নীতিমুক্ত কোন এমপির নাম রাখতে হয়, আমার নাম রাখতে হবে। আবারও নির্বাচিত হলে সকল দল, সকল মতের মানুষের জন্য আগের চেয়ে আরও অনেক বেশী সেবা দিয়ে যাবো সকলে নৌকা প্রতীকে ভোট আবারো নির্বাচিত করলে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সুখি, সমৃদ্ধ ও উন্নয়নশীল দেশ গঠনে নিজেকে উৎসর্গ করবো। ”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনীতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন