মোখা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা: প্রস্তুত ১০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক

fec-image

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এগিয়ে কক্সবাজারের দিকে। আবহাওয়া অধিদপ্তর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কক্সবাজারের প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

আজ থেকে জেলার সব সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেয়া হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা লোকজনকে আশ্রয়ণকেন্দ্রগুলোতে নিয়ে আসতে পারবেন। জেলায় সিসিপির ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঝুঁকিতে রয়েছে সেখানেও ত্রাণ ও
প্রত্যাবাসন কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা তুলনামূলকভাবে সেন্টমাটির্নে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ সেন্টমার্টিনে ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছ। তাই সেখানে সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের
জন্য বলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এমন তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সভায় জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী সহযোগিতা করবেন। তারা তাদের স্থাপনা এবং ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। জরুরি যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাস্তায় গাছপালা পড়ে থাকলে সেগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২৫ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ৫.৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩.৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩.৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।

সভায় আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা বর্তমানে কক্সবাজার থেকে ৯০০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। রবিবার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি রয়েছে। এ সময় ঘন্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, যেহেতু বড় ধরনের কোন ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতিমুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার সকল আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।’

সভায় বলা হয়েছে জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তু রাখা হয়েছে।ওইসব সাইক্লোন শেল্টারের ধারণা ক্ষমতা মোট ৫ লাখ ৫৯৯০ জনের। এ ছাড়া ১৩ মে শনিবার সকাল থেকে মেডিকেল দল, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোালা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল নাম্বার: ০১৮৭২৬১৫১৩২।

সভায় বাাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন মেজর ফাহাদ। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্পর্কে আমাদের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে আমরা ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। এ সংক্রান্ত আমাদের যোগাযোগ সেল খোলা হয়েছে। আমরা আমাদের টিমের সাথে যোগাযোগ রাখবো এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সকল ধরনের ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত রয়েছে।

সভায় পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে দুর্যোগকালীন লোকজনকে সহায়তা এবং সহযোগিতা করতে হয়েছে। লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে এমনটি বলেছেন তিনি।

সভায় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান, সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ খান খলিলুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামানসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকতাগণ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, মোখা, স্বেচ্ছাসেবক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন