যারা দেশ চালায় তাদেরকে গালি, অভিশাপ দেয়া যাবেনা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য নিযুক্ত বিশেষ দা’য়ী হাফেজ ওয়ালী উল্লাহ হাজী নজির আহমদ আশ-শওকী বলেছেন, যারা দেশ চালায় তাদের গালি দেয়া যাবেনা। এটা ইসলামের কোথাও নেই। কেউ অন্যায়-অপরাধ করলে আমাদের উচিত তার হেদায়তের জন্য দোয়া করা। কাউকে অভিশাপ দেয়া যাবেনা। কারণ অভিশাপের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন গজব আসলে তা সকলের উপর প্রভাব ফেলে। কুরআন না মেনে রাসূল’কে (সা:) আঘাত দেয়ার পরও তিনি কাফিরদের জন্য বদ্দোয়া করেনি। বরঞ্চ সকলের হেদায়তের জন্য দোয়া করেছিলেন। এটা উম্মতের জন্য নবীজির (সা:) শিক্ষা।
কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি ও আধুনিক শিক্ষার ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান ইমাম মুসলিম (রহ:) ইসালামিক সেন্টারে ‘শিক্ষার মান উন্নয়ন কর্মশালা’র সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইমাম বুখারী (রহ:) জামে মসজিদের নিচ তলায় এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
তিনি আরও বলেন, একজন আদর্শবান, দায়িত্ববান শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-তিনি আল্লাহকে ভয় করে ক্লাসে ঢুকবেন। তার নির্ধারিত কিতাব অর্থাৎ সাবজেক্ট-এ কিভাবে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সফল করা যায়, তা নিয়ে চিন্তারত থাকেন। টাকা উপার্জনের জন্য নয়, দ্বীনের দাওয়াত হিসেবে শিক্ষাদান করতে হবে। এতে দুনিয়া আখেরাত উভয় দিকে সফলতা আসবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শেখ ওয়ালী উল্লাহ আশ্শওকী আরও বলেন, রাসূল (সা:) এর সীরাত সম্পর্কে জানতে হবে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আক্বিদা সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে হবে ব্যাপকভাবে। রাসূল (সা:) এর জীবনাদর্শ মেনে চললে আমরা সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হতে পারব।
বদর মোকাম জামে মসজিদের ইমাম ও দারুল আরক্বম ইন্টারন্যাশনাল তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক হাফেজ মাওলানা ইউনুছ ফরাজী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসার নির্বাহী পরিচালক ক্বারী মাওলানা ওসমান।
অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস হাফেজ মাওলানা আবদুর রহিম রাহী তার বক্তব্যে বলেন, এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান-প্রোগ্রাম না হলে মুসলিম জাতির ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। আল্লাহ পাক কারো ধন-দৌলত দেখবেন না। তিনি বান্দাহর ঈমান দেখে কিয়ামতে মর্যাদার মান নির্ধারণ করবেন। ঈমানি শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ খুবই জরুরী। কারণ প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জ্ঞান শাণিত হয়। মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় তিনি হাফেজ ওয়ালী উল্লাহ হাজি নজির আহমদ আশ-শওকীকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে হাজী পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম মুসলিমের তাফসীর বিভাগের প্রধান হাফেজ মাওলানা তাহের সাঈদ বলেন, মুসলমানের জন্য আল্লাহর প্রথম নির্দেশ ছিল ‘ইক্বরা’ অর্থাৎ পড়। এ নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বান্দাদের পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। পৃথিবীতে বাঁচতে হলে, যে কোন কঠিন সমস্যা সমাধান করার জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন। জ্ঞান না থাকলে সমাজ, পরিবার, দেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে কখনও নিজেকে পরিচিত করানো যাবেনা। ইমাম মুসলিমের সপ্তাহব্যাপী কর্মশালা ছিল এ জ্ঞান অর্জনের চমৎকার একটি মুহুর্ত। এ প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে রাসূল (সা:) আদর্শে আমাদের বাস্তব জীবন পরিচালিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের বক্তব্য রাখেন, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা ছালাহুল ইসলাম, মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন ও শেখ ওয়ালী উল্লাহ আশ-শওকীর পুত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নজির আহমদ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইমাম মুসলিমের শাখা প্রতিষ্ঠান আবু হুরায়রা ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আমিন উল্লাহ।
অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করেন শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আইয়ুব, সঙ্গীত পরিবেশন করেন পৃথকভাবে নুরুল আমীন ও সঙ্গীরা এবং রাশেদ ও তার সঙ্গীরা। ইংরেজীতে বক্তব্য রাখেন, ফারভেজ, কায়েস উদ্দিন ও ইয়াছমিন আকতার। বাংলায় বক্তব্য রাখেন, সলিম উল্লাহ, রাইহা মনি ও সুমাইয়া আকতার।
অনুষ্ঠান শেষে প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরবর্তী পরীক্ষায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এরপর ইমাম মুসলিম (রহ:) ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ শেখ হাফেজ ওয়ালী উল্লাহ হাজি নজির আহমদ আশ-শওকীকে সম্মান সূচক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কক্সবাজার আদর্শ মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, রামু কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম শামসুল ইসলাম, পিএমখালী নুরুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নেজাম, মক্কা প্রবাসী আলহাজ্ব আবু মাহমুদ বিলাল, ইদ্রিস মোল্লা ও তার সফরসঙ্গীরা, ফারনিকো কক্সবাজার’র স্বত্ত্বাধিকারী আতাউর রহমান, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।