রামুর বৌদ্ধ বিহারে অগ্নি সংযোগকারী যুবক গ্রেপ্তার

fec-image

‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত’ করার উদ্দ্যেশে ‘পরিকল্পিতভাবে’ কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ ঘটনায় জড়িত মো. আব্দুল ইয়াছির ওরফে শাহজাহান (২৩) নামের এক যুবককে চট্টগ্রাম থেকে আত্মগোপন অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যার বাবা বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এবং গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার ( গ্রেপ্তার যুবক ) সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এসপি মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।

গ্রেপ্তার মো. আব্দুল ইয়াছির ওরফে শাহজাহান (২৩) রামু উপজেলার ফতেখাঁরকূল ইউনিয়নের পূর্ব মেরংলোয়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে। তার বাবা বিএনপির ফতেখাঁরকূল ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি।

অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেপ্তার আব্দুল ইয়াছির মূলহোতা বলে দাবি পুলিশের।

গত ৫ জানুয়ারী মধ্যরাত ২ টার দিকে রামু উপজেলা সদরের চেরাংঘাটা এলাকায় ‘উসাইচেন রাখাইন বৌদ্ধ বিহার ( বড় ক্যাং )’ অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় বিহারটির উপরের মূল প্রবেশদ্বারের সিঁড়িটি পুড়ে যায়।

এ ঘটনায় গত ৭ জানুয়ারী বৌদ্ধ বিহারটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি মংকিউ রাখাইন বাদী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার এজাহারের বরাতে মাহফুজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ জানুয়ারী মধ্যরাতে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগের অন্তত ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগে রামু ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে জনৈক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় উপজেলা সদরের অন্তত ২০-৩০ কিলোমিটার দূরের ঈদগড় এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। খবরটি শোনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট দ্রুত ঈদগড় পৌঁছায় এবং এ ধরণের কোন ঘটনার সত্যতা না পেয়ে তারা ফিরে আসে।

“ একই সময়ে ওই একই ব্যক্তি মোবাইল ফোন করে রামু বিদ্যুৎ অফিসকে চেরাংঘাটা এলাকায় আগুন লাগার তথ্য দিয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানায়। “

ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি করাকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং পরিকল্পিত দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, মূলত অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি বাধাহীন করতে ঘটনার মূলহোতা আব্দুল ইয়াছির ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ অফিসকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। পরে পরিকল্পনা মত বৌদ্ধ বিহারে দুষ্কৃতিকারিরা অগ্নিসংযোগ করে।

মূলত বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে মন্তব্য করে মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোনের কলের সূত্র ধরে পুলিশ জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। এতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার মূলহোতা চট্টগ্রামে অবস্থান করার ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়। পরে গত ৯ জানুয়ারী চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় জনৈক আত্মীয়ের বাড়ীতে আত্মগোপন অবস্থায় মো. আব্দুল ইয়াছিরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার আসামির প্রাথমিক স্বীকারোক্তির বরাতে পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সময় আব্দুল ইয়াছির একাই ছিল। আর অগ্নিসংযোগের জন্য সে কিছু কাপড়ের টুকরা এবং বড় একটি বোতলে তরল দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করেছে। পরে ঘটনার সময় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে সিমকার্ডটি আলাদা করে নিজের এলাকার কচু ক্ষেতে ফেলে দিয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপন করেছিল।
ঘটনাটি একাই সংঘটিত নাকি আরও কারা জড়িত এ ব্যাপারে তথ্য পেতে গ্রেপ্তার আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানান মাহফুজুল ইসলাম।

এসপি জানান, গ্রেপ্তার আসামি আব্দুল ইয়াছিরের বাবা আব্দুল করিম বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা। পরিবারটির সকলে বিএনপির ঘরনার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। গ্রেপ্তার আব্দুল ইয়াছিরকে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে সরব অংশগ্রহণ দেখা গেছে। এছাড়া বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাকে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। এমনকি তার ফেইসবুক আইডিতেও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেপ্তার, বৌদ্ধ বিহার, রামু
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন