লামায় পাহাড়ী পল্লীতে পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা

water p

লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামা উপজেলার পাহাড়ী পল্লীগুলোতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাহাড়ীঝিরি, ঝর্ণা ও নদীর দূষিত পানি পান করা সহ নিত্য দিনের চাহিদা মেটাচ্ছে তারা। ফলে ওই এলাকাগুলোতে আবারও ডায়রিয়াসহ নানাবিধ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন পাহাড়ীরা। পাহাড়ী পল্লীগুলোতে ডায়রিয়ায় শতাধিক পাহাড়ী আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় শতশত ঝিরি-ঝর্ণা রয়েছে। এসব পাহাড়ী ঝিরি থেকে কম বেশী পানি প্রবাহিত হয় সারা বছর। পাহাড়ী অরণ্যের পল্লীগুলোয় বসবাসরত প্রায় দুই লাখ জনসাধারণের মধ্যে কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ পাহাড়ী ঝিরি, ঝর্ণা ও কূয়ার পানি পানসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। ফলে লোকজনের মাঝে পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গজালিয়া, লামা সদর, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই, ফাইতং ও রূপসীপাড়া ইউনিয়নের গ্রামীণ এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক স্থাপিত নলকূপগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকলেও জনস্বাস্থ্য বিভাগ সেগুলো মেরামত বা সংস্কারে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, বর্তমানে কিছু এলাকায় টিউবওয়েল ও রিংওয়েল স্থাপনের কাজ চলছে।

রূপসীপাড়ার খিংখিং মার্মানী ও গজালিয়ার রেবেকা ত্রিপুরা জানান, তাদের পাড়া দু’টিতে প্রায় ৭০-৮০ পরিবারের বসবাস। পাড়া দু’টি প্রায় ১ হাজার ফুট পাহাড়ের উপরে হওয়ায় কোনও মৌসুমেই বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থাকেনা। তাই তারা বাধ্য হয়ে পাহাড়ী ঝিরি, ঝর্ণা ও নদীর পানি ব্যবহার করছেন।

রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাছিং প্রু মার্মা জানান, দুর্গম পাহাড়ী পল্লীগুলোতে রিংওয়েল বা টিউবওয়েল তেমন একটা নেই। যেগুলো আছে সেগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে পানি ওঠে না। তিনি জানান, শুস্ক মৌসুমে আশপাশের ঝর্ণা, কূয়া, ছড়াগুলোও শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। পাহাড়ীরা দূষিত পানি পান করে বিগত বছরগুলোর ন্যায় আবারও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন । তিনি পানীয় পানির সমস্যা নিরসনের জন্য বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যাশৈহ্লা বলেন, রিংওয়েল ও টিউবওয়েলে পানির লেয়ার পাওয়া যায়না তাই চলতি অর্থ বছরে ছোট ছোট পানি সরবরাহ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে জেলার ৭ উপজেলার পানীয় পানির সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ মামুন চৌধুরী জানান, পাহাড়ীঝিরি, ঝর্ণা, খাল-বিলের দূষিত পানি পান করলে জন্ডিস, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। যে সমস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্থা নেই সে সব এলাকার মানুষকে পানি ফুটিয়ে অথবা পানিতে পরিমাণমতো ফিটকিরি বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মিশিয়ে পানি পান করার পরামর্শ দেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন