পাহাড়ি সংগঠনগুলো অধিকার আদায়ের কথা বললেও

সম্প্রীতির বান্দরবানে আধিপত‌্য, চাদাঁবাজি এবং অঞ্চল দখলে মরিয়া

fec-image

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। মারমা, চাকমা, ম্রো, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বম, খেয়াং, চাক, পাংখো ও ত ঙ্গা মিলিয়ে সংখ্যা প্রায় ৭৮ হাজার। বাঙ্গালীসহ বর্তমানে এ জেলার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ।

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে নানা জাতির বসবাস ও শান্তির জন্যই বান্দরবান সম্প্রীতির শহর হিসেবে পরিচিত। শান্তি চুক্তির পরও যখন রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে খুনোখুনি চলছিল তখন বান্দরবানে উন্নয়ন এবং পাহাড়ি-বাঙ্গালীরা ছিল শান্তিতে।

সর্বশেষ গত ৮ জুলাই বান্দরবান শহরের নিকটে বাঘমারায় নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।

ওইদিন ব্রাশফায়ারে ছয় উপজাতী খুন হওয়ার পর শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ইতোপূর্বে গত কয়েক বছর অপহরণ ও খুনের প্রবণতা দেখা গেলেও সিক্স মার্ডারের মিশনটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।  এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পাচঁদিন পর (১৩জুলাই) মামলার এজাহারভুক্ত আসামিসহ ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হচ্ছেন কুহালং ইউনিয়নের উজিপাড়ার বাসিন্দা এজাহারভুক্ত দুই নাম্বার আসামি অংপ্রু মারমা (৪০) এবং অজ্ঞাতনামা আসামি সুশান্ত চাকমা (৩২)।

এই ঘটনার আগে ২ জুলাই সদর ইউনিয়নের হেব্রন পাড়া থেকে মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে আওয়ামী লীগ সমর্থক লুলাথাং বম (৩০)কে ধরে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এখনো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

৫ জুলাই কুহালং ইউনিয়নের রাবার বাগান এলাকা থেকে একইভাবে অপহৃত হন গুংগা জলি ত্রিপুরা (৪১)। তার সন্ধানও এখনো মিলেনি। স্থানীয়দের মতে, অপহরণকারী সন্ত্রাসীরাই সিক্স মার্ডার ঘটনার সাথে জড়িত।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা), জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) এবং মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি)র ত্রিমুখী বিরোধের জের ধরে সিক্স মার্ডার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

তবে জেএসএস (এমএন লারমা) দলের উত্থান দমিয়ে দিতেই হামলাটি হয়েছে এটি অনেকটা নিশ্চিত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

জানা গেছে, মূলধারার জেএসএস রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির চেয়ে বান্দরবানে আধিপত্য বিস্তার করে চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সম্প্রতি এই জেলায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে সংস্কারপন্থি নামে পরিচিত জেএসএস এমএন লারমা পন্থি দলের সদস‌্যরা।

এছাড়াও গত এক বছরের অধিক সময় ধরে মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) নামে আরো একটি সংগঠন বান্দরবানে খুনোখুনিতে তৎপর ছিল।

সংশ্লিষ্টদের মতে, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সংগঠনগুলোতে ভাঙ্গন হলেও এখন তারা পার্বত্যবাসীর অধিকার আদায়ের কথা বলে নিজেদের আধিপত‌্য বিস্তার, চাদাঁবাজি এবং অঞ্চল দখলে রাখতে পারস্পরিক দ্বন্ধ-সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে।

পাহাড়ে এমন সন্ত্রাসের কারনে সাধারণ মানুষের শান্তির ঘুম যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বাড়তি টেনশন ভোগ করতে হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ইসলাম বেবি বলেন, বান্দরবানকে শান্তি আর সম্প্রীতির জনপদ বলা হয়। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার দায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদেরকেই নিতে হবে।

তারা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী খুন করেছে। অনেকের হদিস পাওয়া যায়নি। তাঁর মতে, শান্তিবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও বীজ রেখে গেছে।

উল্লেখ‌্য, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে বান্দরবান অশান্ত হয়ে পড়ে। তখন খুনোখুনির জন্য মগ পার্টি আলোচনায় ছিল। তারা জেএসএসের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষে জড়ায়।

মগ পার্টি গত বছরের ২৫ জুন থেকে জেএসএসের একাধিক কর্মী-সমর্থককে হত্যা করে।

সিএইচটিআরএফ এর গবেষনা তথ্য মতে, গত দেড় বছরে পাল্টাপাল্টি হত্যাকাণ্ডে বান্দরবানে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের চারজন, জেএসএস সংস্কারপন্থী ছয়জন, এমএনপি দুইজন ও তিনজন সাধারণ উপজাতি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য জেলা, বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন