সাজাভোগের পরও দেশে ফিরতে পারছে না ভারতের সাব্রুম থানায় আটক ফটিকছড়ির ৫ ব্যক্তি

fec-image

ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুম মহকুমার সদর থানায় সীমাহীন দু:খ-কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পাঁচ ব্যক্তি। অবৈধভবে সীমান্ত পারাাপারের অপরাধে আটক হয়ে সাজা ভোগের পরও তারা দেশে ফিরতে পারছেন না। নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। এদিকে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র রামগড়ের ৪৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেছেন, আটক ব্যক্তিদের গ্রহণের ব্যাপারে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।

সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুর ইউনিয়নের গামারিতলার বাসিন্দা বিল্লাল শেখ (৩৫), মো: আব্দুর রহিম (২২), একই ইউনিয়নের গলাকাটা গ্রামের মোহাম্মদ হাসেন (৫২) এবং জাফরনগর ইউনিয়নের জাফরনগর গ্রামের মোহাম্মদ আলম (৫৬) ও একই ইউনিয়নের ফতেহাপুর গ্রামের মো: দিদার আলম (৫২) প্রায় দুই মাস যাবৎ ত্রিপুরার সাব্রুম থানার হাজতে আছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তারা রামগড় সীমান্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করার পর বৈষ্ণবপুর এলাকায় বিএসএফ তাদের আটক করে।

অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অপরাধে বিএসএফ তাদের বিরুদ্ধে সাব্রুম থানায় মামলা দেয়। ১ নভেম্বর সাব্রুম থানার পুলিশ এদের আদালতে হাজির করার পর ১০ দিনের জেল দেন আদালত।

সূত্র জানায়, ত্রিপুরার বিলোনিয়া কারাগারে ১০ দিনের জেল খাটার পর বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠাতে এ পাঁচ ব্যক্তিকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। জানা যায়, সাব্রুমের ৬৬ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ এ ব্যাপারে রামগড়স্থ ৪৩ বিজিবি বাটালিয়নে পত্র পাঠায়। বিজিবি ঐ ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিক কি না এটি যাচাই বাচাইয়ের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

ফটিকছড়ির জাফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল হালিম মুঠোফোনে বলেন, ‘ভারতে আটক পাঁচ ব্যক্তিই ফটিকছড়ির বাসিন্দা। তম্মধ্যে মোহাম্মদ আলম ও মো: দিদার আলম জাফরনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রামাণ্য কাগজপত্র বিজিবির কাছে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে রামগড়ের বিজিবির এক কর্মকর্তার সাথে তিনি ফোনেও কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, আটক ব্যক্তিরা অত্যন্ত দরিদ্র। কাজের সন্ধানে হয়তো তারা ত্রিপুরায় গিয়েছিল। তিনি বলেন, দিনমজুরি করে তারা সংসার চালাতেন। দু-আড়াই মাস যাবৎ তারা ভারতে আটক থাকায় তাদের পরিবার পরিজন এখন অনাহারে অর্ধাহারে অমানবিকভাবে দিনাতিপাত করছে। এছাড়া তারা দেশে ফিরতে না পারায় স্বজনরা অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় আছেন।

রামগড় উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার ফারুক বলেন, ভারতে আটক পাঁচজনের আত্মীয় স্বজনরা বহুবার তার কাছে এসেছেন। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আটক ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রদত্ত নাগরিকত্বের সনদসহ বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রয়োজনীয় সব প্রামাণ্য কাগজপত্র তিনি বিজিবিকে পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে রামগড়ের বিজিবির অধিনায়ককে অনুরোধ করেছেন বলেও তিনি জানান।

রামগড়স্থ ৪৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্নেল মো: তারিকুল হাকিম, পিএসসি বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। বিএসএফের কাছ থেকে আটক ব্যক্তিদের গ্রহণ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণলয়ে চিঠি পাঠানো হযেছে। মন্ত্রণালয় হতে সিদ্ধান্ত পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, ভারতের আগরতলার দৈনিক পত্রিকা ডেইলী দেশের কথা’য় গত ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক রিপোর্টে  উল্লেখ করা হয়, কারাভোগের পর আটক ৫ বাংলাদেশী সাব্রুম থানা হাজতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ওদের খাবার-দাবার ও শীতের গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করেছেন। ঐ রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয় তারা নিজ দেশে পরিবার পরিজনের কাছে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। তাদেরকে দেশে দ্রুত ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বিজিবি, সীমান্ত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন