স্বাভাবিক টেকনাফ সীমান্ত, উত্তপ্ত মংডুর আশপাশ

fec-image

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই চলছে। তবে মিয়ামার-বাংলাদেশ সীমান্ত দুদিন ধরে তুলনামূলক শান্ত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশে এপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গত কয়েকদিন যুদ্ধভীতি কমে এসছে।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী চৌকিগুলো আরাকান আর্মি দখলে নেওয়ায় দেশটির সরকারি বাহিনী মংডুর দিকে সরে গেছে। তবে বিদ্রোহীরাও তাদের পিছু তাড়া করে সেদিকে ছুটছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত স্বজনদের বরাতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা।তারা বলছেন, এখন মূলত মংডু শহরের আশপাশের এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই হচ্ছে। এ কারণেই সীমান্ত বরাবর গোলাগুলির তীব্রতা অনেকটাই কমে এসেছে।

মংডুর এপারে টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ।

শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা নূর আহমেদ বলেন, “সোমবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার পর্যন্ত গোলাগুলি কিংবা ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়নি। এতে মঙ্গলবার রাতে শান্তিতে ঘুমিয়েছে এলাকাবাসী।

“তারপরও ভয় হয় কখন আবার গোলাগুলি শুরু হয়। সোমবার দিনভর থেমে থেমে টেকনাফের হ্নীলা, সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা গিয়েছিল।”

টেকনাফের লেদা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ হারেস বুধবার বিকালে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, “রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের পাশের বলিবাজার, মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় লড়াই এখনও চলছে।

যুদ্ধ সরেছে ‘মংডুর আশপাশে’, শান্ত টেকনাফ সীমান্ত

“বিদ্রোহীরা মংডুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের নলবন্ন্যা এলাকায় ব্যাপক লড়াইয়ের পর বিদ্রোহীরা আরও একটি ঘাঁটি দখল করেছে।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরও কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেন, গত ১৮ দিনের লড়াইয়ে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে বিদ্রোহী আরকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তের অধিকাংশ সীমান্ত চৌকি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এ কারণেই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে লড়াইয়ের তীব্রতা কমে এসেছে।

তাদের দাবি, তিন-চার দিন ধরে দুই পক্ষের লড়াই মংডু শহরকে ঘিরেই হচ্ছে। ধীরে ধীরে বিদ্রোহীরা মংডু শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, “মংডু শহরের আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যাপক গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের আওয়াজ এপারে আসছিল। মাঝে মধ্যে বিকট শব্দে কেঁপে উঠছিল টেকনাফ সীমান্ত। দুই দিন ধরে গোলাগুলি কিংবা ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়নি।”

তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রভাবে এপারের বাসিন্দারা জীবন-জীবিকা নিয়েও সংকটে পড়েছে। নাফ নদীতে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ থাকার পাশাপাশি স্থানীয়দের বহনকারী নৌযান চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে।”

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, “সোমবার সকালে হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলেরডেইল সীমান্তে টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। তবে রাতভর গোলাগুলির কোনো শব্দ আসেনি। মঙ্গল ও বুধবার সকাল থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

এদিকে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে নাফ নদী এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত টহলও বাড়ানো হয়েছে। স্থলভাগে পুলিশের টহল ও চারটি বিশেষ দল কাজ করছে। উদ্ভূত সীমান্ত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে যেন কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “দুইদিন ধরে কোনো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। সীমান্তে বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”

এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। দু-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি

সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে ঠিকতে না পেরে ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের বৃহস্পতিবার সাগরপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।

এর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী ও অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া গোলাগুলিতে আরও নয়জন আহত হন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, মিয়ানমার, সীমান্ত উত্তেজনা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন