স্বাভাবিক হয়ে আসছে রাঙামাটি জেলা শহরের পরিস্থিতি

10815986_809908549079664_1537653892_n

স্টাফ রিপোর্টার :

রাঙামাটি শহরে উপজাতি ও বাঙালীর দু’পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনার দু’দিন পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের কারণে শহরে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। জনমনে দূর হতে চলেছে একে অপরের প্রতি সৃষ্ট অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা, ভয় ও শংকা। তাই মঙ্গলবার সকাল ৭টার পর রাঙামাটি শহর থেকে কারফিউ তুলে নেয় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ রাখা হয়েছে। বর্তমানে শহরে উপজাতি-বাঙালীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে আসছে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাঙামটি জেলা প্রশাসনের আহবানে অনুষ্ঠিত হয়েছে শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ সভা। এতে ঘটনার পর পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর মাঝে যে পরস্পর অবিশ্বাস, সন্দেহ, সংশয়, শংকা ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করে একে অপরের প্রতি সৌহার্দ, সম্প্রীতি, সহনশীল ও সহমর্মিতা ফিরিয়ে এনে আগের মতো শান্তিশৃংখলা ও সহাবস্থান গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।

সভায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সামসুল আরফিন বলেন, এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষায় বিশেষ ক্ষমতা আইন বলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আইনের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে। তিনি কোনো রকম দ্বিধাবোধ না করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ দায়িত্ব পালন না করলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলে সতর্ক করে দেন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে।

তিনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ১৪৪ ধারা আইনের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করা লোকজনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, আইনশৃংখলা রক্ষায় আইনের সর্বশক্তি প্রয়োগ করা হবে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. শামসুল আরফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ২৯৯-পার্বত্য জেলা রাঙামাটি আসনের সদস্য ঊষাতন তালুকদার, রাঙামাটির সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. রেদওয়ান আহমেদ, বিজিবির রাঙামাটি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ওসমান, সেনাবাহিনীর রাঙামাটি সদর জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল শামস্, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ, রাঙামাটি পৌরসভা মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো, সাবেক উপমন্ত্রী মণিস্বপন দেওয়ানসহ রাজনৈতিক, সামজিক, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতা, সামরিক বেসামরিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও অন্য পেশাজীবী নেতারা।

সভা শেষে জেলা প্রশাসনসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির সব সম্প্রদায়ের লোকজনের সম্মিলিত উদ্যোগে শহরে একটি শান্তি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি জেলা প্রশাসন চত্ত্বর থেকে বের করে শহরের বনরুপা পেট্রোলপাম্প এলাকা ঘুরে আবার জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্ত্বর গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে শহরে শান্তি র‌্যালি বের করার জন্য দুপুরের পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা শিথিল রাখে জেলা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি মেডিকেল কলেজের পাঠদান কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এবং যুব-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে তা ১১জানুয়ারি রুপ নেয় পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতায়। এতে দ্রুত শহরব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আতংক-উত্তেজনা ও জাতিগত দাঙ্গা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওইদিন শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। কারফিউ জারির সঙ্গে সঙ্গেই কঠোর অবস্থানে যায় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি শহরে মোতায়েন করা হয় এলিট ফোর্স র‌্যাবের একটি টিম। কারফিউ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গণগ্রেফতারসহ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় আইনশৃংখলা বাহিনী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন