মিয়ানমারের জান্তা সরকার অস্ত্র ও সমর্থনের জন্য মস্কোর দ্বারে

fec-image

ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর পশ্চিমা বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন রাশিয়া। একই অবস্থা মিয়ানমারেরও। দেশটিতে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর একঘরে হয়ে পড়েছে নেপিডো। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও মিয়ানমার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়াতে তৎপর হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে সম্প্রতি মস্কো সফরে যান মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। উদ্দেশ্য, দুই দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক জোরদার এবং পারমাণবিক জ্বালানির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা করা।

রোববার (১৭ জুলাই) প্রকাশিত কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, মস্কোতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগুর সঙ্গে বৈঠক করেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। ওই বৈঠকের পর মিয়ানমারের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানায়, বর্তমানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিতে এবং সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়াতে দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে অং সান সু চি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। তবে সেই অভ্যুত্থানের তেমন একটা আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়নি জান্তা সরকার। এরপর আবার সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলন সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে পাশে পেয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বেশ কয়েকবার রাশিয়া সফরে গেছেন। পশ্চিমা অনেক দেশই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সামরিক কর্মকর্তা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও সে পথে হাঁটেনি রাশিয়া। বরং রাশিয়া ও চীন জান্তা সরকারকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে। এসব অস্ত্র দেশটির বেসামরিক লোকজনের ওপর ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৮ মাসে দেশটিতে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থা প্রগ্রেসিভ ভয়েসের চেয়ারপারসন খিন ওহমারের ভাষায়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের সহায়তা করছে ও উৎসাহ দিচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। জান্তা প্রতিদিনই এই অপরাধ করছে। তবে এর কোনো দায় তারা নিচ্ছে না।

রাশিয়ার কাছ থেকে জান্তা সরকার সবচেয়ে বড় সহায়তা পেয়েছে বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে। সম্প্রতি মিয়ানমারের যে প্রতিনিধি দল মস্কো সফরে যান, এর মধ্যে ছিলেন বিমানবাহিনীর প্রধান। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর গড়ে উঠেছে জান্তা সরকারবিরোধী প্রতিরোধ গোষ্ঠী। পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নামের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী স্থলযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কিছু জয় পেয়েছে। তবে তাদের হাতে কোনো যুদ্ধবিমান নেই। ফলে যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়ে রণক্ষেত্রে বড় সুবিধা পাচ্ছে সেনাবাহিনী।

ব্যাংককভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিসের মতে, হামলা, পণ্য পরিবহন ও সেনা সদস্যদের আনা–নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাশিয়া ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলের উড়োজাহাজগুলোর ওপর নির্ভর করে। এসব উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ সরবরাহ না করা হয় এবং প্রশিক্ষণ না দেওয়া হয়, তাহলে বিমানবাহিনী শিগগিরই বড় সমস্যায় পড়বে।’

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর বড় ধাক্কাটা এসেছে ভিন্নমতালম্বীদের ওপর। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং তো ঘোষণাই দিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনীর বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করা হবে। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, অভ্যুত্থানের পর হামলার জেরে ঘর ছাড়তে হয়েছে প্রায় সাত লাখ বেসামরিক মানুষকে।

গত বৃহস্পতিবারেই সাগাইং অঞ্চলের তাবাইন শহরে পিডিএফের ঘাঁটিতে হেলিকপ্টার হামলা চালায় মিয়ানমারের বিমানবাহিনী। ওই হামলা পর ১৫টি গ্রাম থেকে চার হাজার বেসামরিক মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রেডিও ফ্রি এশিয়া। এর আগে গত মার্চে গোপনে ছয়টি এসইউ–৩০ যুদ্ধবিমান রাশিয়া থেকে মিয়ানমারের আনা হয় বলে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

বেসামরিক লোকজনের ওপর জান্তা সরকারের হামলা নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চে কায়াহ ও কারেন প্রদেশে আটটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে রাশিয়া ও চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান। এ অঞ্চলে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র বাহিনীর অবস্থান রয়েছে। তবে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূলত বেসামরিক লোকজন।

প্রগ্রেসিভ ভয়েসের চেয়ারপারসন খিন ওহমার বলেন, দেশজুড়ে ত্রাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে অবৈধ জান্তা সরকারের একটি প্রধান কৌশল হলো নির্বিচার বিমান হামলা। আর এসব হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার।

অপর দিকে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছ থেকে রাশিয়া বড় সুবিধা নিচ্ছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিস। প্রথমআলো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জান্তা সরকার, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন