সিরিয়াল খুন আতংকে বান্দরবান

fec-image

বান্দরবানে সিরিয়াল খুনের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এক মাস থেমে থাকার পর মঙ্গলবার ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে আরো ২ জন খুন হলো। এই নিয়ে গত তিন মাসে বান্দরবানে খুন হয়েছেন ৫ জন আওয়ামী লীগ ও ৩ জেএসএস নেতা। তাদের কাউকে কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত, কাউকে ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ আবার কাউকে গুম করে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। এই অবস্থায় বান্দরবানে আতংকে রয়েছে টার্গেটে থাকা অন্য নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, গত মে মাস থেকে বান্দরবানে প্রতিনিয়ত ঘটছে খুনোখুনি। ঘটনার শুরু থেকেই এ সব খুনোখুনির জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জেএসএসকে দায়ী করে আসছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। জেএসএস এর সন্ত্রাসী আটক ও তাদের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য বান্দরবানে হরতালসহ ধারাবাহিক নানা কর্মসূচীও পালন করেছে আওয়ামী লীগ। তবে বরাবরের মতো জেএসএস এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে মগ লিবারেশন পার্টি কর্তৃক জেএসএস নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে বলে দাবী করেন।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর টার্গেটে রয়েছে। যার মধ্যে বান্দরবানে সিনিয়র ১০ জনের অধিক আওয়ামী লীগ নেতার নাম রয়েছে। তবে সম্প্রতি একটি প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ক্যশৈহ্লা জেএসএস এর সন্ত্রাসীদের টার্গেটে আওয়ামীলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী রয়েছে বলে দাবি করেন।

সূত্র মতে, ২০১৬ সনের ১৪ জুন বান্দরবান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুমংপ্রু কে অপহরণ করা হয়। অদ্যবদি তাঁর সন্ধান মেলেনি। এরপর গত ১৮ মার্চ রাঙামাড়িতে ৭ খুনের পর পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধের অংশ হিসেবেই পাহাড়ে তথা বান্দরবানে ধারাবাহিক এইসব হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের পেছনে জেএসএস ও মগ লিবারেশন পার্টিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

সর্বশেষ গত ২৩ জুলাই রাতে লামা সদর উপজেলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর সিকদার (৩৮) কে গলাকেটে এর আগের দিন (২২ জুলাই) রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মংবা থুই মারমাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। জুন পুরো একমাস শান্ত ছিল বান্দরবান।

এর আগে (২০ মে) বান্দরবানের রাজবিলায় আওয়ামী লীগ নেতা ক্যচিং থোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর তিনদিন পর (২৩ মে) পৌর আওয়ামীলীগ নেতা চথোয়াই মং মারমাকে খামারবাড়ি থেকে অপহরণ করে বাড়ির অদূরে নিয়ে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

(৭ মে) সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের দুর্গম তাইংখালী এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিনয় তঞ্চঙ্গ্যা (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত বিনয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে ৯ নম্বর সইনক্ষ্যংপাড়ায় গিয়ে পুরাধন তঞ্চঙ্গ্যা (৪৫) নামের একজন অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

(১৪এপ্রিল) তাইংখালী বাজারে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ঢুকে অংক্যচিং মারমা (৫০) নামের একজনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। তিনি জনসংহতি সমিতির রাজবিলা ইউনিয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন।

এই প্রসঙ্গে বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান য়ই সা প্রু মারমা বলেন- খুন, গুমের কারনে মানুষ আতংকে আছে। আমরা এমন অশান্তির পরিবেশ চাই না। আমি একজন নারী হিসেবে কোন স্ত্রী স্বামীকে হারাক, কোন সন্তান তার বাবাকে হারাক, কোন বোন তার ভাইকে হারাক তা আমরা চাই না। এই পরিস্থিতিতে আইন শৃংখলা বাহিনীর আরো জোরালো ভূমিকার আহ্বান জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, ক্যচিং থোয়াই মারমা, জেএসএস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন