ইয়াবা-আইসের মতো মাদকের পাচার কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না?

fec-image

বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মাদকের চালান আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। জব্দ করা মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে ইয়াবা।

বিভিন্ন সময়ে পাচারের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথাও অনেক সময় উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত শুক্রবার (১৯ মে) রাতে কক্সবাজারে ২০ হাজার ইয়াবাসহ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) -এর একজন এসআই ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্র্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এছাড়া চলতি বছরেই বিভিন্ন সময় কক্সবাজার, টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ইয়াবা জব্দ করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রকাশিত সবশেষ হিসেব অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ মাসেই প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৯ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে।

আর বাংলাদেশের ২০২২ সালের বার্ষিক ড্রাগ রিপোর্ট অনুযায়ী, সব সংস্থা মিলে গত ৫ বছরে প্রায় ২১ কোটি ৬৬ লাখেরও বেশি ইয়াবা জব্দ করেছে।

ইয়াবার চালান ঠেকাতে সরকারি নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না এই মাদকের বিস্তার। এখন ইয়াবার পাশাপাশি ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের মতো ভয়ঙ্কর মাদকও আসছে বাংলাদেশে।

বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চক্র একসময় বাংলাদেশকে মাদকের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করলেও এই ব্যবসায় বাণিজ্যিক লাভের যে সুযোগ আছে তাতে অভ্যন্তরীণ বাজারও তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে ইয়াবা-আইসের মতো মাদক প্রবেশের অন্যতম রুট হলো কক্সবাজার ও মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা টেকনাফ রুট।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম ইমদাদুল হক বলছিলেন, আশির দশকে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা ফেনসিডিলের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছিল মাদকসেবীদের কাছে। এরপর কিছু সময় হেরোইনে আসক্ত হয় মাদকসেবীরা। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকে টেকনাফ অঞ্চল মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট। আশির দশকে হেরোইন চোরাচালানের রুট হিসেবে এটা বেশ ব্যবহার করতো চোরাকারবারিরা। আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশকে একটা করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।

‘মাদক কারবারিদের কাছে এখন ইয়াবা পাচারের অন্যতম রুট টেকনাফের রুট’ বলেন অধ্যাপক ইমদাদুল হক।

২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে যেভাবে মাদক কারবার বেড়েছে তাতে দেশের ভেতরে এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাদকসেবীদের প্রথম পছন্দই এখন ইয়াবা’।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে গত পাঁচ বছরে শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলা থেকেই আট কোটির বেশি ইয়ারা উদ্ধার করা হয়েছে। আর গত দুই বছরে এই জেলা থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আইস উদ্ধার করা হয়েছে।

এই টেকনাফ রুট দিয়ে এলএসডি এবং আইসের মতো মাদক আসছে। যেটা বেশ ‘অ্যালার্মিং’ বলে উল্লেখ করছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থায় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের কাছাকাছি হওয়ায় সহজেই এই পথ বেছে নিতে পারছেন মাদক কারবারিরা। তারা রাতের আঁধারে বা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন সময় এই রুট বেছে নিচ্ছেন।

টেকনাফের সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমারে বেশ কিছু ইয়াবা কারখানা তৈরি হয়েছে, যেখান থেকে ইয়াবার চালানগুলো বাংলাদেশে এসে ঢুকছে।

‘মিয়ানমার এবং বাংলাদেশী সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিরা বিভিন্ন উপায়ে ইয়াবার চালান মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে এবং এখান থেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে সেগুলো পাচার করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় রাতের আঁধারে হয়তো তারা সীমান্ত অতিক্রম করছে, তখন হয়তো তাদের আটকানো যাচ্ছে না’ বলছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সঞ্জয় কুমার চৌধুরী।

মাদক পাচার ঠেকাতে প্রত্যেকটা বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, আলাদাভাবে কাজ করলে মাদকের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

‘সীমান্তে কীভাবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে যুগপৎভাবে কাজ করতে হবে বাহিনীগুলোকে’ বলেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আইস, ইয়াবা, পাচার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন