টেকনাফ জালিয়ারদ্বীপ এলাকায় আইস ও সিমেন্ট উদ্ধার, আটক ৪

fec-image

কক্সবাজারের টেকনাফে অভিযান চালিয়ে ২ কেজি ১১৭ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৪০০ বস্তা সিমেন্ট এবং ১টি ইঞ্জিন চালিত কাঠের বোটসহ চারজনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

আটককৃত হলেন- উখিয়া উপজেলার কুতুবপালং ২ নম্বর ক্যাম্পের এফসিএন নম্বর-১৪২৪৬৪, বাসা নং-১৫, ব্লক এ/১ এর বাসিন্দা আব্দুদের ছেলে রোহিঙ্গা মো. জুবায়ের (৩০), টেকনাফ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড জালিয়াপাড়ার মো. কামাল হোসেনের ছেলে মো. সাদেক হোসেন (২৯), সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড কোনাপাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে মো. হামিদুর রহমান (১৯) এবং একই এলাকার মো. বাবুলের ছেলে মো. ইমরান (১৯)।

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ (বিজিবিএমএস) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, রবিবার (৪ জুন) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন দমদমিয়া বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বিআরএম-৮ থেকে আনুমানিক ১.৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে জালিয়ারদ্বীপ এলাকা দিয়ে বোটযোগে মাদকদ্রব্য পাচার হতে পারে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ব্যাটালিয়ন সদর এবং দমদমিয়া বিওপি থেকে দুইটি চোরাচালান প্রতিরোধ টহলদল বর্ণিত এলাকায় গমন করে কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে। টহলদল কিছুক্ষণ পর জালিয়ারদ্বীপের উত্তর দিকে দমদমিয়া এবং হ্নীলা বিওপির মধ্যবর্তী স্থানে সন্দেহভাজন একটি ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোট দেখতে পায়। টহলদলের সন্দেহ হওয়ায় উক্ত বোটকে তল্লাশির জন্য থামানো হয়। পরবর্তীতে উক্ত বোটে আরোহিত একজন মিয়ানমারের ও তিনজন বাংলাদেশি নাগরিককে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বোট তল্লাশির এক পর্যায়ে আরোহিত ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিতে বোটে থাকা সিমেন্টের বস্তার নীচ থেকে ২ কেজি ১১৭ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য বহনের দায়ে বর্ণিত বোট এবং বোটে থাকা ৪০০ বস্তা সিমেন্টও জব্দ করা হয়।

আটককৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, উক্ত ইঞ্জিনচালিত বোটটি তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক (মাঝি) সহ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সেন্টমার্টিন থেকে ভাড়া করে টেকনাফ স্থল বন্দরে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরোও জানা যায়, আকটকৃত মিয়ানমার নাগরিক মাদকসহ মিয়ানমার থেকে লালদ্বীপ হয়ে টেকনাফ বন্দরে আগমন করে। উক্ত মিয়ানমার নাগরিক টেকনাফ স্থল বন্দর, বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক ৪০০ বস্তা সিমেন্ট বোটে লোড করে এবং সিমেন্টের বস্তার নীচে মাদকদ্রব্য লুকিয়ে রাখে। উল্লেখ্য, উক্ত মাদকদ্রব্য হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে এবং সিমেন্ট নিয়ে মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা যায়। এসময় মিয়ানমার নাগরিকের কাছে একটি ইউনিফর্মের ক্যাপ পাওয়া যায় এবং ধারণা করা যায় যে, এই ক্যাপটি নবী হোসেন গ্রুপের ইউনিফর্মের ক্যাপ। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে উক্ত সিমেন্টের মালিক নবী হোসেন এবং উক্ত মিয়ানমারের নাগরিক নবী হোসেন গ্রুপের সদস্য বলেও অনুমেয়।

টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানা যায়, টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে বড় কার্গো বোটের মাধ্যমে যে সকল পণ্য আমদানি করা হয়, সে সকল পণ্য বন্দরে খালাস করার পর পুনরায় উক্ত কার্গো বোটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পণ্য রপ্তানি করা হয়। কিন্তু টেকনাফ বন্দর থেকে বাংলাদেশি বোটে করে কোন পণ্য মিয়ানমারে রপ্তানি করা হয় না। এছাড়া রাতের অন্ধকারে বন্দর থেকে ইঞ্জিন চালিত কাঠের বোটটি টেকনাফ বন্দরের উত্তর দিকে হোয়াইক্যং এর উদ্দেশ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।

তিনি আরো জানান, আটককৃত সিমেন্ট এবং কাঠের বোট টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও আসামিদের বিরুদ্ধে (একজন মিয়ানমার নাগরিক ও তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক) জব্দকৃত ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ নিয়মিত মামলার মাধ্যমে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আইস, জালিয়ারদ্বীপ, টেকনাফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন