রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাড়ছে স্থানীয়দের আস্থাহীনতা

দুই বছর আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা লাখ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলদেশে প্রবেশ করার সময় স্থানীয় মানুষ দল বেঁধে তাদের এগিয়ে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু এরইমধ্যে এই স্থানীয় লোকজনই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে দুই বছর পর বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরো মারমুখি হয়ে উঠেছে।
২৫ আগস্ট তারা উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ টি ক্যাম্পে বাংলাদেশে আশ্রয়ের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আলাদাভাবে সমাবেশ করছে। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনেও চলছে অস্থিরতা।
এরমধ্যে টেকনাফের হ্নীলা জাদিমোরায় যুবলীগ নেতা খুনের ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের যে কোনো সম্ভাব্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি রয়েছে রোহিঙ্গাদের। ক্যাম্পের একাধিক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, তারা কোনোভাবেই পিছু হঁটবেন না। এ জন্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে তারা প্রস্তুত।
রোহিঙ্গাদের এমন আচরণ প্রসঙ্গে উখিয়া ক্যাম্প-১৩ এর হেড মাঝি মুজিব উল্লাহ বলেন, বিভিন্ন ক্যাম্পে কিছু রোহিঙ্গা নেতা সক্রিয় আছেন। তাদের নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। তবে আমরা বাংলাদেশের প্রশাসনকে কথা দিয়েছি আমাদের ক্যাম্পে এ সব করতে দেব না।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেদেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রতিবাদ সমাবেশ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এ নিয়েও স্থানীয় লোকজন এবং প্রশাসনের মধ্যে বিভিন্ন টানাপোড়ন চলে। একেক জনের একেক কথা প্রকাশ পায়। এরপর যুবলীগ নেতা খুনের রেশ ধরে স্থানীয়দের মাঝে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে। চলছে বিভিন্ন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও সমাবেশ। এরই মধ্যে খুনের ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পের অনেক জায়গায় কর্মরত এনজিও’র কার্যক্রম বন্ধ রাখে। এখনো নামেমাত্র অনেক এনজিও’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নামেমাত্র অফিসে গিয়ে বসে থাকেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল মনসুর বলেন, রোহিঙ্গাদের আচরণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। টেকনাফে যুবলীগ নেতা খুনের পর তা আরো বেড়েছে। তবে আমরা স্থানীয় লোকজনকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে চেষ্টা করছি যাতে তারা কোনোভাবেই বিক্ষুব্ধ হয়ে না উঠে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগে রাখাইনের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে যে মনোভাব স্থানীয়রা পোষণ করেছিল, এখন তা আর নেই। বিশেষ করে তারা নিজ দেশে ফিরে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় অনেকেরই মোহভঙ্গ ঘটেছে। যারা নিজ জমি ও বাড়িতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, তারা নিজেদের জমিজমা হারানোর শঙ্কায় আছেন।
টেকনাফ উপজেলার জাদিমুড়া এলাকার মুদি দোকানদার জসিম উদ্দিন নিজের ১৪ একর পাহাড়ি জায়গা শরণার্থীদের থাকার জন্য সানন্দে দিয়ে দেন। কিন্তু দুই বছর পর আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এখন আর আমার কিছু নেই। আমার জমি ও ব্যবসাসহ সবকিছু রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রনে।
তবে উখিয়া কুতুপালং ওয়ান ইস্ট, ওয়ান ওয়েস্ট, থ্রি, ফোর ও ফোর এক্সটেনশন ক্যাম্প এর ইনচার্জ শামীমুল হক পাবেল বলেন, টেকনাফে যুবলীগ নেতা খুনের ঘটনায় ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ঘটনার পেছনে রাজনীতি থাকতে পারে। ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্তের সুযোগ রয়েছে।