২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৩ বছর:

এক কাপড়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই আজ কোটিপতি

fec-image

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট পরবর্তী যে রোহিঙ্গা এক কাপড়ে এদেশে পালিয়ে এসেছিল সেই রোহিঙ্গা মো. আয়াছ র্যাবের হাতে আটক হয়েছে ১৩ লাখ ইয়াবা নিয়ে। যার মূল্য প্রায় ৩৯ কোটি টাকা। র্যাবের হাতে আটক আয়াছ উখিয়ার বালুখালী ১৩ নাম্বার ক্যাম্পের এইচ ব্লকের বশির আহমদের ছেলে।

এই আয়াছের মতো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা গত ৩ বছরে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতির খাতায় নাম লিখেছেন। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৩ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। মিয়ানমার সেনা, বিজিপি, নাটালা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে উখিয়া-টেকনাফের ৩২ টি রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।

এই বিশাল রোহিঙ্গার চাপে ন্যুজে হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। উখিয়া-টেকনাফে ৫ লক্ষাধিক স্থানীয়দের খাবার-দাবারের উপর ভাগ বসিয়েছে রোহিঙ্গারা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বাস্তবে রোহিঙ্গার কারনে স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুরু থেকে আমরা সেই কথাটি মাথায় রেখে গত তিন বছর ধরে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত হোস্ট কমিউনিটির জন্য সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

রোহিঙ্গার ঢল অনুপ্রবেশের ৩ বছর অতিবাহিত হতে চললেও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। ঝুলিয়ে আছে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। এই পর্যন্ত ২ দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও নানান সমস্যার কারনে তা আর বাস্তাবায়ন হয়নি।

এছাড়া রোহিঙ্গারা তাদের দেওয়া ৫ টি দাবি পুরণ না হলে স্বদেশে ফিরবে না বলে বারবার বলে আসলেও বর্তমানে কিছুটা নমনীয় হয়ে উঠেছে।

কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা মাহামুদুর রহমান বলেন, শুরু থেকে আমরা নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য যে ৫টি দাবী দিয়ে আসছিলাম তা থেকে সরে এসেছি। এখন মিয়ানমার সরকার মাত্র ২টি দাবী পুরণ করলে আমরা (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারে ফিরে যাব। দাবী গুলো হচ্ছে-ফেলে আসা ভিটে-বাড়ি ফেরত এবং নাগরিকত্ব।

শিক্ষা: এদিকে ১০লক্ষাধিক রোহিঙ্গার কারনে উখিয়া-টেকনাফে শিক্ষা-দীক্ষা লাটে উঠেছে। কেননা রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এনজিওদের চাকরি আছে, সেই সাথে রয়েছে ঠিকাদারি কাজ। স্থানীয় ছাত্র/ছাত্রীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে চাকরি এবং ঠিকাদারির কাজে জড়িয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ কক্সবাজারে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ উখিয়া কলেজে রয়েছে ৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অজিত দাশ এ প্রসঙ্গে বলেন, গেল এইচএসসি পরীক্ষায় তৎমধ্যে অংশ গ্রহণ করেছিল ৫৬৩ জন, আর পাশ করেছে মাত্র ১৬৯জন। পাশের হার ৩০%। তিনি বলেন, ছাত্র/ছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিভিন্ন এজিওতে ঢুকে পড়েন। যার ফলে পাশের হারের এই অবস্থা।

এসময় উক্ত কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর মাহামুদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, উখিয়া উপজেলার মেধাবী সন্তান মো. শফিউল আলম দেশের সর্বোচ্চ সরকারি কর্মকর্তা মন্ত্রী পরিষদ সচিব ছিলেন।

তিনি গত ২০১৯ সালে অবসরে গিয়ে বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। ভবিষ্যতে আরেকজন শফিউল আলম সৃষ্টি হবে কি না সন্দেহ আছে।

অধ্যাপক আলমগীর মাহামুদ দুঃখের সাথে বলেন, রোহিঙ্গার কারনে শিক্ষা-দীক্ষায় যে প্রভাব পড়েছে এতে অন্তত ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে উখিয়া-টেকনাফের শিক্ষা ব্যবস্থা।

আইনশৃঙ্খলা: রোহিঙ্গা শিবিরে গত ৩ বছরে মারাত্বকভাবে অবনতি ঘটেছে। প্রতিটি ক্যাম্পে গ্রুপে গ্রুপে রয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। গত ৩ বছরে অভ্যান্তরিণ দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারসহ নানান কারনে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা অভিযোগ করে বলেন, এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে সাধারণ রোহিঙ্গারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পে যে সমস্ত রোহিঙ্গা ছেলে-মেয়ে চাকরি করে তাদের থেকে এই গ্রুপকে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা করে মাসে চাঁদা দিতে হয়। তাছাড়া প্রতিটি বাজার, দোকান থেকে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) শামসু-দ্দোজা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত স্বাভাবিক রাখার জন্য এবিপিএম আর্ম পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সাথে সার্বক্ষণিক টহলে থাকবেন সেনাবাহিনী এ র্যাব। সুতারাং পূর্বের তুলনায় বর্তমানে আইশৃংখলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৩ বছর: রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রোহিঙ্গা কোন ধরনের কর্মসুচী গ্রহণ করেছে কিনা জানতে চাইলে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা কালীন সময়ে কোন ধরনের গণজমায়েত সভা-সমাবেশ করা হচ্ছেনা ২৫ আগস্ট।

কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ইনচার্জ খলিলুর রহমান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনার কারনে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের গণজমায়েত, সভা-সমাবেশ করা যাবেনা বলে নির্দেশনা রয়েছে। তাই এখানে এ ধরনের কর্মসূচী পালন করার কোন সুযোগ নেই।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে কর্মসূচীর ব্যাপারে এ ধরনের কোন আবেদন করা হয়নি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা চাইলে নিজ নিজ বাসায় দোয়া ও রোজা রাখতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: এনজিও, মিয়ানমার, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন