রামগড়ে এনজিওর ঋণের চাপে দিনমজুরের আত্মহত্যা

fec-image

খাগড়াছড়ির রামগড়ে এনজিওর ঋণের চাপে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ইসমাইল হোসেন(৩০) নামে এক দিনমজুর।

সোমবার (১৪ আগস্ট) বিকালে পুলিশ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছে।

পুলিশ জানায়, সোমবার স্থানীয় ইউপি মেম্বারের কাছ থেকে খবর পেয়ে উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সোনারখীল গ্রামে একটি ঘর থেকে গলায় রশি বাধা ঝুলন্ত অবস্থায় ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি সোনারখীল গ্রামের মৃত মো. ইদ্রিসের ছেলে এবং দুই সন্তানের জনক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , কৃষি দিনমজুর ইসমাইল স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সাপ্তাহে ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয় তাকে। পিতা-মাতাহীন ইসমাইল ফুফুর বাড়িতে থাকতেন। বিয়ের পর পারিবারিক ঝামেলায় ফুফু তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে দিশেহারা হয়ে পড়েন। পরে একটি এনজিও থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অল্প জায়গা কিনে একটি ঘর তৈরি করে সেখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাথা গোঁজেন।

এদিকে আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় সংসারের ভরণপোষণের খরচ চালাতেই হিমিশম খায় সে। এ অবস্থায় ঋণের সাপ্তাহিক আড়াই হাজার টাকার কিস্তি পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে তার। ঋণের কিস্তির জন্য এনজিও’র চাপ, পরিবারের ভরণ পোষণ চালাতে অক্ষমতা ইত্যাদি কারণে মানিসকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এ কঠিন অবস্থায় ৩-৪ দিন আগে সে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মো. আমান উল্লাহ জানান, রবিবার বিকেলে সে একা শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে আসে। সোমবার দুপুরে নিজের গরুটি ঘরে এনে বেঁধে রাখেন। গরুর রশির একটি অংশ কেটে নিয়ে ঘরের চালের আঁড়ার সাথে বেধে গলায় ফাঁস দেয় সে। ঐ সময় ঘরে সে ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। দুপুরে বাপের বাড়ি থেকে এসে তার স্ত্রী সালমা দেখেন ঘরের সামনের দরজায় তালা দেয়া এবং পিছনের দরজা ভিতর থেকে রশি দিয়ে বাঁধা। দরজার রশি খুলে ঘরে ঢুকে দেখেন স্বামী ইসমাইল গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। ইউপি মেম্বার বলেন, তিনি থানায় খবর দেয়ার পর পুলিশ এসে ঝুলন্ত অবস্থায় ইসমাইলের লাশ উদ্ধার করে।

ইউপি সদস্য আমান উল্যাহ আরও বলেন, ফুফু বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেয়ার পর ইসমাইল একটি এনজিও থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জায়গা কিনে ঘর বানায়। এ ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে তার। দিনমজুরির সামান্য আয় দিয়ে অন্ত:সস্ত্বা স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়েসহ ৪ জনের সংসারের খরচ মেটাতেই হিমশিম অবস্থা ছিল। এ অবস্থায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ সম্পূর্ণ অক্ষম ছিল সে।

পাতাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম বলেন, ‘হতদরিদ্র ইসমাইল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি। তবে কারণ জানতে পারিনি।’

রামগড় থানার ওসি (তদন্ত) ফখরুল ইসলাম বলেন, ইসমাইল এনজিও’র ঋণে জর্জরিত ছিল । ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ না করায় রবিবার সালিসও হয়েছিল। এ নিয়ে সে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত ছিল। এ কারণেই আত্মহত্যার পথ বেচে নেয় সে। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ তার বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পাঠায়। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা রুজু হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আত্মহত্যা, ঋণ, এনজিও
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন