উপকুলে বানবাসী মানুষের আশ্রয় এখন পলিথিনের তাঁবু


চকরিয়া প্রতিনিধি :
চকরিয়ায় টানা ছয়দিন পর ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে উপজেলার পুর্বাঞ্চলের ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বির্স্তীণ জনপদের প্রত্যন্ত এলাকার লোকালয় থেকে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। কমে গেছে মাতামুহুরী নদীর পানির প্রবল প্রবাহ। তবে উপকুলের সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করেছে।

উপজেলার পশ্চিমাঞ্চালের বিএমচর, কোনাখালী, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালী ইউনিয়নের দুর্গত শত শত পরিবার পানিতে তলিয়ে থাকা বাড়ি-ঘর ছেঁড়ে গত চারদিন ধরে পরিবার সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে চকরিয়া-টৈইটং-বাশঁখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং চিরিঙ্গা বদরখালী সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে। সড়কের ওপর তাঁরা পলিথিনের টাবু টাঙ্গিয়ে সেখানে গাদাগাদি করে কোনমতে বসবাস করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চকরিয়া-টৈইটং-বাশঁখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের চকরিয়ার লালব্রীজ থেকে কোনাখালী বাংলা বাজার সেতু পর্যন্ত এলাকায় সড়কের দুই পাশে শত শত পরিবার পলিথিনের টাবু টাঙ্গিয়ে ছোট ছোট ঘর তৈরী করে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। সড়কে আশ্রয় নেয়া বেশির ভাগ পরিবার দরিদ্র শ্রেণীর। টানা চারদিন ধরে সড়কের পলিথিনের তাঁবুতে আশ্রয় নেয়ার কারণে পরিবারের উর্পাজনক্ষম কেউ কাজে যেতে পারছে না। ফলে দুর্গত পরিবারগুলোতে খাবার ও পানীয় জলের চরম সংকট চলছে। বেশির ভাগ পরিবার অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

আঞ্চলিক মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছেন বিএমচর ও কোনাখালী ইউনিয়নের দুর্গত জনপদের মানুষ। জানতে চাইলে আশ্রয় নেয়া পরিবার সদস্যদের দাবি, বানের পানিতে বসতঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে আমরা সড়কে পলিথিনের টাবুতে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা গত চারদিন ধরে শুকনো খাদ্য ও পানীয়জলের সংকটে থাকলেও প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিরা কোন ধরণের খোঁজ খবর নেয়নি।

কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার কারনে দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গত জনপদের দরিদ্র পরিবার গুলো বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়কে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ হিসেবে কিছু পরিমাণ চিড়া ও চিনি দেয়া হয়েছে, যা দুর্গত মানুষের তুলনায় অপ্রতুল। তারপরও আমরা বরাদ্ধ পাওয়া এসব চিড়া ও চিনি দুর্গত মানুষের হাতে পৌঁছে দিয়েছি। নতুন করে বরাদ্দ পেলে তাদের মাঝে আবারও বিতরণ করা হবে।

উপজেলার পশ্চিমবড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলা ও বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর ও ঢেমুশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, ভারী বর্ষণের কারনে মাতামুহুরী নদীর পানি প্রচন্ড বেগে বেড়িবাঁধ ও স্লইচ গেইট টপকে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে করে উপকুলের বেশির ভাগ ইউনিয়নের নীচু এলাকা পানির সাথে একাকার হয়ে গেছে।

তাঁরা আরো বলেন, বানের পানিতে উপকুলের মানুষ জিন্মি হয়ে পড়েছে। দুর্গত এসব মানুষ পলিথিনের তাঁবু টাঙ্গিয়ে পরিবার সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও চিরিঙ্গা বদরখালী সড়কে। বর্তমানে দুর্গত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও পানীয় জলের হাহাকার চলছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকার ফলে উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী ও পৌরসভার লোকালয় থেকে বানের পানি অনেকাংশে নেমে গেছে। কিন্তু উপকুলীয় ইউনিয়ন সাহারবিল ছাড়া বিএমচর, কোনাখালী, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালী ইউনিয়নের জনসাধারণ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে আজ-কালের মধ্যে প্রত্যেক এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন