উপজাতিদের সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির পথে
সাইফুল ইসলাম
প্রতিটি দেশের উপজাতিদের কিছু পৃথক সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশের উপজাতিদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। প্রকৃতির সাথে বাংলাদেশের উপজাতিদের এক গভীর সম্পর্ক্ রয়েছে। বাংলাদেশের উপজাতিরা দীর্ঘদিন থেকে পাহাড়ে জুম চাষ করে আসছে। পাহাড় হতে কাঠ, বাঁশ ও মধু আহরণ, পশু শিকার ও পশু পালন, মাছ ধরা ইত্যাদি বাংলাদেশের উপজাতিদের প্রধান পেশা। বলা যায় এই পেশাগুলো তাদের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উপজাতিদের নিজেদের কারনেই আজ এ সকল সংস্কৃতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। উপজাতিদের কেউ কেউ চায় ঐতিহাসিক সেই সব সংস্কৃতি ও পেশাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে। অপরপক্ষে কেউ কেউ চায় সেগুলোকে ভূলে আধুনিক হতে। অর্থাত্ এমপি, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, গবেষক হতে। আবার এমনও কিছু উপজাতি আছে যারা একত্রে দুটিই চায়।
একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, উপজাতিদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও আধুনিকতা একটি অপরটির সম্পূর্ন বিপরীত। কাজেই একই সাথে দুইটি দাবি করা যে পণ্ডশ্রম ছাড়া কিছুই না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু উপজাতিরা কখনই স্বীকার করতে রাজি না যে এর জন্য তারা নিজেরাই দায়ী।
কিছুদিন থেকে তারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলে বেড়াচ্ছে যে তারা বাংলাদেশের আদিবাসী (যদিও বাংলাদেশে নেই)। তারই অংশ হিসেবে এবিসি রেডিওতে আইএলওর সহযোগিতায় তারা সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী “আদিবাসী কণ্ঠ” নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করছে। সেই অনুষ্ঠানে আবার অতিথি হিসেবে কিছু কিছু রাজাকার বাঙ্গালিও যাচ্ছে। মুঠোফোনে এবিসি রেডিওর রেডিও জকি(আরজে) কে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসী বলে কিছু নেই, যা আছে সবাই বাংলাদেশী। তাহলে দেশী আইন বা সংবিধান না মেনে কেন আমরা সংবিধানের বিপরীত মতবাদ আইএলও কনভেনশন বা জাতিসংঘ আইন মানব? কি লাভ তাতে? আর উপজাতি বললে কি ক্ষতি?’ আমার প্রশ্নের জবাবে সেখানে উপস্থিত এক বাঙ্গালী রাজাকার বলেছিল, ‘আদিবাসী অর্থ এই নয় যে, আদিতে যারা ছিল। বরং এর অর্থ হল মাটি ও প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক আছে এই রকম কিছু জাতি, যাদের আছে নিজস্ব সংস্কৃতি। আর তাদেরকে(উপজাতি) যে নামে ডাকলে তারা খুশি সে নামেই ডাকা ভাল।’
এখন যে উপজাতিরা আমাদের দেশে বসবাস করছে, মাটি ও প্রকৃতির সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নাই। এখন তাদের দেখা যায় বড় পর্দায় মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ হিসেবে। তাদের সংস্কৃতিও আজ ততটা দেখা যায় না। তাছাড়া উপজাতিরা বাংলাদেশের আদি নিবাসীও নয়। তাহলে কোন যুক্তিতে তাদেরকে আদিবাসি বলব?
আমি ওয়াদা করে বলছি, শুধু আমি না, আমার সাথে হাজারো জনতা উপজাতিদের আদিবাসী বলবে। তবে শর্ত হচ্ছে আগে উপজাতিদের মাটি ও প্রকৃতির সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে। এমপি, মন্ত্রী কিংবা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান না হয়ে হতে হবে আদি পেশা কৃষক, জেলে, কাঠুরে যেগুলো মাটি ও প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
আর যদি উপজাতিরা আদিবাসি হতে না চায়, তাহলে তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করব একজন বাংলাদেশী হিসেবে। কেউ তাদেরকে ক্ষুদ্রজাতি হিসেবে ভাববে না। সবাই পূর্ন প্রতিযোগীতার মাধ্যমে চাকরী করব, এমপি কিংবা মন্ত্রী হব। তবে একটি কথা, কেউ বেশী অধিকার পাবে না, সবাই সম-অধিকার নেব।
অনেক ধন্যবাদ লেখাটি প্রকাশ করার জন্য।